কিছু কিছু মানুষের সারা জীবনটাই যেন সাধারণ মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে থেকে যায়। তাঁরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন, কিভাবে শুধু মানুষকে সাহায্য করার মনোভাব নিয়েই মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া যায়। এইসব মানুষের সারা জীবনের সাফল্য, বড় পুরষ্কার, সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিগুলি তাঁদের কর্মের কাছে ফিকে হয়ে যায়। ঠিক যেমনটা হয়েছে ডাক্তার তপন লাহিড়ীর ক্ষেত্রেও।
ডাক্তার তপন লাহিড়ী একজন জনপ্রিয় চিকিৎসক, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন এবং মানবপ্রেমিক। জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ জানুয়ারি। কলকাতায়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করে উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দেন ইংল্যান্ড। ১৯৬৯ সালে কার্ডিয়াক সার্জারিতে এফআরসিএস করেন। ১৯৭২ সালে থোরাসিক সার্জারিতে এমসিএইচ ডিগ্রি লাভ। দেশে ফিরে ১৯৭৪ সালে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে রিডার পদে যোগ দেন।
সহকারী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক, তারপর কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগের প্রধান হন তিনি। তখন তাঁর বেতন এক লক্ষেরও বেশী। কিন্তু, ১৯৯৭ সাল থেকে বেতন নেওয়া বন্ধ করে দেন। ২০০৩ সালে বিএইচইউ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তারপর থেকে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। নিজের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু নিয়ে পেনশনের বাকি অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে দেন তিনি। অবসরের পরেও অবসর তাঁর নেই। বিনা চিকিৎসায় তিনি এখনও মানুষের চিকিৎসা করে চলেছেন।
২০১৬ তিনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন। যেখানে আজ ডাক্তার মানেই মানুষের মনে একটাই ছবি আসে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা, দামী গাড়ি, বাড়ি। কিন্তু ডাক্তার লাহিড়ী আজও হেঁটেই যাতায়াত করেন। তাঁর মানবিক গুণাবলী তাঁকে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। তিনি মানুষকে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি তিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য গ্রামে বিভিন্ন শিবিরের আয়োজন করেছেন। ডাক্তার লাহিড়ীর মতো ব্যক্তিত্বরা সমাজে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকেন। তাঁর মত ব্যক্তিরাই মানুষকে মানবসেবার প্রকৃত অর্থ শেখান।
Discussion about this post