হাওড়া জেলার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাসমেলার প্রাণকেন্দ্র হল উলুবেড়িয়া। এই শহরে কার্তিক মাসের পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত রাসমেলা পশ্চিমবঙ্গের একটি বিখ্যাত উৎসব। শতাব্দী প্রাচীন উলুবেড়িয়া আনন্দময়ী কালীবাড়িতে এই রাস উৎসবের আয়োজন করা হয়। ১৩২৭ বঙ্গাব্দে ১৭ই বৈশাখ শুক্লা ত্রয়োদশী তিথিতে গঙ্গা নদীর তীরে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন মহকুমা শাসক যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শরৎচন্দ্র ধারার উদ্যোগে মন্দিরটি গড়ে ওঠে।
মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে রাস উৎসব পালিত হয়ে আসছে। জানা যায়, ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ অর্থাৎ ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সূচনা হয় এই রাসমেলার। রাসবিহারী বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুভারম্ভ হয় উলুবেড়িয়া রাস উৎসবের। প্রথমদিকে এটি একটি ছোট আকারের উৎসব ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় এবং এটি একটি বড় আকারের উৎসবে রূপান্তরিত হয়।
এই রাসমেলা এক মাসব্যাপী চলে। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার বিশাল প্রতিমা। এই প্রতিমা সাজানো থাকে অপরূপ সাজে। রাসমঞ্চে প্রতিদিন পূজার্চনা চলে। শেষ তিনদিন নিয়ম করে আচার অনুযায়ী হরিনাম সংকীর্তন হয়। এই মেলায় কয়েকশো দোকানপাট বসে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান। পুরাণ মতে, কার্তিক মাসের পূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে রাধা-কৃষ্ণের রাসলীলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই পবিত্র দিনে ভক্তরা ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় রাসলীলায় মেতে ওঠেন।
উলুবেড়িয়ার রাসমেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বটে। এখানে নৃত্য, গান, নাটক সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। রাসমেলায় পুতুলের মাধ্যমেও বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। রাসমেলা শুধুমাত্র উলুবেড়িয়ার নয়, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের একটি আকর্ষণ। হাজার হাজার মানুষ প্রতিবছর এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন।
চিত্র ঋণ – মধুরিমা মান্না
Discussion about this post