চারিদিকে শুরু হয়ে গিয়েছে পুজো পুজো রব। আর বাঙালির প্রাচীন পুজো বললেই সবার আগে মনে পড়ে বনেদি বাড়ির পুজোর কথা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এইসব ঐতিহ্যবাহী পুজোতে সত্যিই যেন ইতিহাস কথা বলে। সেরকমই একটি ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজো হল হুগলির চুঁচুড়ার পালবাড়ির পুজো। প্রতিবছর উমার আগমনে সেজে ওঠে পালবাড়ি। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এই পালবাড়িতে দুর্গা পুজো হয়ে আসছে এবং এখনো সেই একইরকম ধুমধাম করে পুজো হয়। তবে অন্যান্য বনেদি বাড়ির পুজোর সঙ্গে পালবাড়ির দুর্গা পুজোর কিছু তফাৎ রয়েছে। এই দুর্গা পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এখানে প্রতিমা তৈরি করে পুজো হয় না। বরং দেবীর পটচিত্র অঙ্কন করে তারপর পুজো শুরু হয়।
এই পালবাড়ির কুলদেবতা হলেন রাধামাধব গোপাল জিউ। এই দেবতা এবং তার দেবমূর্তি পালবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই বংশের পূর্বপুরুষ সেবক রামপালের সময়ে। শোনা যায় কোন এক সাধু রামপালকে কুলদেবতা হিসেবে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি উপহার দিয়েছিলেন। তবে সেই সময়, আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে রাধাকৃষ্ণের পুজো হয়নি সেই বাড়িতে। তবে পরে একদিন তিনি স্বপ্নাদেশ পান কুলদেবতার পুজো শুরু করার। আর্থিক অবস্থা উন্নতির বরও পেয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই পাল বাড়িতে শুরু হয় রাধাকৃষ্ণের পুজো। সেবক রামপাল ধীরে ধীরে বিপুল ধন-সম্পদের অধিকারী হন। ধনী হওয়ার পর তার ইচ্ছা হয়, বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু করার। আর তখন থেকেই পালবাড়িতে দুর্গা পুজোর প্রচলনও শুরু হয়।
কিন্তু অন্যান্য বনেদি বাড়ির পুজোর মতো এখানে কখনোই প্রতিমা আনা হয় না। মায়ের পুজো হয় পটচিত্রের মাধ্যমে। তবে, শুধু পটচিত্র নয়, এই পালবাড়ির দুর্গা পুজোর আরো বেশ কিছু বিশেষ নিয়মাবলি রয়েছে, যা আজও অক্ষর অক্ষরে মেনে চলা হয়। পুজোর আচার অনুষ্ঠান বিশেষভাবে পুরুষরা পরিচালনা করেন। মায়ের জন্য নৈবেদ্য সাজানো থেকে শুরু করে কনকাঞ্জলি দেওয়া সবকিছুই পুরুষরা করেন। পুজো শেষে কুলদেবতা রাধামাধব তাঁদের মন্দিরে ফিরে যান এবং পটচিত্রটি পুজোর পরে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তার সঙ্গে জমিয়ে ৪ দিন ভোগ-প্রসাদ খাওয়া তো রয়েছেই। এই পুজো দেখতে রীতিমতো ভিড় জমান সাধারণ মানুষরাও। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, হুগলির চুঁচুড়ার এই ৪০০ বছরের পুরনো পুজো আগের মতই এখনো জমজমাট।
Discussion about this post