বাংলার রথযাত্রা একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে। অনেকেরই বিশ্বাস রথযাত্রার দিন রথের দড়িতে হাত ছোঁয়ালে নাকি মনস্কামনা পূর্ণ হয়। তাই অনেকেই এই দিন সমস্ত কাজ ফেলে রেখেও রথের দড়ি টানতে যান। এই দিন বিভিন্ন জায়গায় জাঁকজমকের সাথে রথযাত্রা পালন করা হয়ে থাকে। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কোথাও বসে মেলা, আবার কোথাও লোকসংস্কৃতির উৎসবের আয়োজন করা হয়। পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার অন্ডাল সিডি ব্লকে দামোদর ও অজয় নদীর মাঝখানে অবস্থিত উখড়া। এই অঞ্চলের রথযাত্রা হল পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্যতম প্রাচীন উৎসব।
এই রথযাত্রা প্রায় ১৮৪ বছর ধরে চলে আসছে। জানা যায়, ১৮৪০ সালে তৎকালীন গ্রামের জমিদার শম্ভুনাথলাল সিংহ হান্ডার উদ্যোগে উখড়ার জমিদার বাড়ির রথের সূচনা হয়। রথযাত্রার দিন রথে চাপানো হয় জমিদার বাড়ির কুলো দেবতা গোপীনাথ জীউ সহ অন্যান্য দেবদেবীর বিগ্রহ। শম্ভুনাথলাল সিংহ হান্ডার উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছিল কাঠের রথ। যার নির্মাতা ছিলেন শিল্পী রামগোপাল সেন। পরবর্তীকালে জমিদার বাড়ির চতুর্থ পুরুষের বংশধরেরা সেই কাঠের তৈরি রথটিতে পুনরায় নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপরই নির্মাণ করা হয় পিতলের রথ। যেটি নির্মাণ করেছিলেন বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানার আদুড়িয়া-অমরপুরের রাধাবল্লভ কর্মকার এবং টিকরবেতার শিল্পী রমানাথ কর্মকার।
রথের সামনে একটি ফলকে লেখা আছে “ঔঁ শ্রীশ্রী গোপীনাথ জীউর রথ। উখড়া।” হাণ্ডা পরিবারের রথ নবরত্ন মন্দির রীতিতে নির্মিত। রথটি ২৫ ফুট উঁচু, ১৮ ফুট দীর্ঘ এবং ১২ ফুট প্রস্থ। রথের সামনের দেয়ালে জ্যামিতিক নকশা এবং রাধাকৃষ্ণ, রাম-সীতা-হনুমান ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। রথযাত্রার দিন সকালে রথপুজো করা হয় দুর্গামন্দির ‛চাঁদনি’–তে। আগে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত গোপীনাথ জিউ চাঁদনি বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে এই প্রথা পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে রথযাত্রার দিন বিকেলে রথ চাঁদনি থেকে বাজপেয়ী মোড় পর্যন্ত গিয়ে ওইদিনই ফিরে আসে। আবার উল্টোরথেও একই রীতি পালন করা হয়।
হাণ্ডা পরিবারের রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই রথযাত্রা বর্ধমান জেলার গর্ব এবং পর্যটকদের কাছে এক আকর্ষণ। রথযাত্রার দিন হাজার হাজার মানুষ উখড়ায় জড়ো হয় রথ টানতে ও রথযাত্রা দেখতে। এই উৎসব এক সপ্তাহ ধরে চলে। ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মেলা এই রথযাত্রা উৎসবকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
Discussion about this post