উত্তরবঙ্গের পাহাড়ের প্রতিটি পরতে নতুন কিছু চমক লুকিয়ে থাকে। তেমনই এক চমক হল স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘ওম’ উপন্যাসের সেই ছোট্ট পাহাড়ি জনপদ মানেভঞ্জন। এখানেই প্রথম শুনেছিলাম এই জায়গার নাম। নেপালী ভাষায় যার অর্থ বৌদ্ধস্তূপের জংশন। দার্জিলিং থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অপূর্ব সৌন্দর্য্যের নিদর্শন উত্তরবঙ্গের পর্যটন ক্ষেত্রে বিশেষ আকর্ষণ। প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়ার জন্য, মনকে শান্ত করার জন্য বেড়াতে যাওয়ার সেরা ডেস্টিনেশন হতে পারে মানেভঞ্জন।
চারপাশে ঘন সবুজ বনানী, ঝর্ণার মৃদু সুর এবং নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘ মানেভঞ্জনকে করে তোলে রহস্যময়। কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্যও উপভোগ করা যায় এই গ্রাম থেকে। ট্রেকিং প্রেমীদের জন্য স্বর্গরাজ্য সান্দাকফু এবং ফালুট যাত্রা শুরু হয় এখান থেকেই। সিঙ্গালিলা ফরেস্টের ভিতর দিয়ে রয়েছে সুন্দর ট্রেকিং রুট। মানেভঞ্জন থেকে সান্দাকফু রুটে প্রতিটা জায়গাই মনোরম। পাইন গাছের গভীর জঙ্গল, বুনো পশুপাখির ডাক, গ্রাম্য পরিবেশ, সুন্দর পাহাড়ি ঝর্ণা, রডোডেনড্রনের হাতছানি – এ যেন এক অন্য পৃথিবী। যেদিকেই তাকাবেন কোনও না কোনও দৃশ্য দেখে চোখ আটকে যাবেই।
দার্জিলিঙের মধ্যে একমাত্র এই স্থানেই অতীত কালের একটি বড় সংগ্রহ ১৯৫০ সালের ল্যান্ড রোভার গাড়ি রয়েছে। এখানে এই গাড়িগুলি অসমতল ভূমি এবং খাড়া ভূখণ্ডের উপরে ভ্রমণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এখান থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়তে পারেন ভ্রমণে। মানেভঞ্জন থেকে পাহাড়ের উপর উঠতেই প্রথমে পথে পড়বে চিত্রে। আবহাওয়া পরিস্কার থাকলে ওখান থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ স্লিপিং বুদ্ধ দেখা যাবে। এরপর আস্তে আস্তে এগোলেই পৌঁছে যাবেন টংলু। এখান থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য খুবই আকর্ষণীয়, বিশেষ করে স্লিপিং বুদ্ধের উপর সূর্যোদয় । এই পথে টংলুর অসাধারণ ভিউ, কালিপোখরিতে ঝিল আর ভ্যালী, তার সঙ্গে সান্দাকফু থেকে মন ভোলানো কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য – কিছুই বাদ দেওয়া যায় না।
এখানে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষই নেপালী। তাই নেপালী সংস্কৃতির প্রভাব স্পষ্ট মানেভঞ্জনের মানুষের জীবনযাত্রায়। যারা অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে চান তারাও এখানে আসতে পারেন। এবার জেনে নেওয়া যাক কীভাবে পৌঁছবেন মানেভঞ্জন? প্রথমে ট্রেনে করে আসতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন। এরপর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন মানেভঞ্জন। প্রস্ফুটিত রডোডেনড্রনের প্রাণবন্ত রং এবং মনোরম আবহাওয়া উপভোগ করার জন্য এপ্রিল থেকে জুনকে মানেভঞ্জন ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হিসেবে ধরা হয়। এছাড়াও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরও এই স্থান ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময়।
Discussion about this post