ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে আনলক পর্ব। ফলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফেরার আশায় রাজ্য সহ গোটা দেশ৷ খুলছে সরকারী-বেসরকারী নানা প্রতিষ্ঠান। তবে এসবের মধ্যেও দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি কিন্তু এখনও নিষেধাজ্ঞায় বন্দী। বাতিল হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাও। কিন্তু তাই বলে কি বন্ধ থাকবে রোজকার পড়াশোনাও? তাই বাড়িতে বসেই অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই। ভার্চুয়াল ক্লাসের মাধ্যমেই চলছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর প্রচেষ্টা। তবে বিষ্ণুপুরের রাধানগরের শিক্ষক সৌম্য সেনগুপ্ত চেনা ছকের বাইরে সামান্য হলেও বেরোলেন তিনি!
বিষ্ণুপুরের রাধানগর বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌম্য বাবু টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার এক সুন্দর উপায় বের করেছেন। টিভির কেবল অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় কেবল চ্যানেলের মাধ্যমেই নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা পরিষদের পাঠক্রম অনুযায়ীই চলছে পড়া বোঝানো এবং নতুন তথ্যের সাহায্যে অজানাকে জানার এই ক্লাস। শুধু তাই নয়, পাঠক্রমের বাইরেও রোজকার জীবনযাত্রায় প্রয়োজনীয় নানা বিষয়েও চলছে ক্লাস। এই সমগ্র পদ্ধতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সিটি কেবল অপারেটর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টার একটি স্লটে সিটি কেয়ার চ্যানেলে চলছে এই ভার্চুয়াল ক্লাস। রাজ্যের সমস্ত শিক্ষার্থীরাই যাতে এই চ্যানেল দেখতে এবং তার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এখনও রাজ্যের বহু শিক্ষার্থীর কাছেই মোবাইল বা ইন্টারনেট নেই। তাই তাদের জ্ঞান লাভের রাস্তাকে সহজ করে দিতেই সৌম্যবাবুর এই উদ্যোগ।
এই অভিনব উদ্যোগটিতে সৌম্য বাবু একা নন, পাশে পেয়েছেন আরও বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষক, বেশ কিছু চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞকেও। যেমন সাপ বিশেষজ্ঞ ডঃ দয়াল বন্ধু মজুমদারও সামিল এই বিশেষ উদ্যোগে। তাঁদের সবার প্রচেষ্টাতেই নিয়মিত এক ঘন্টা টেলিভিশনের পর্দায় চলছে ক্লাস। অঙ্ক, বাংলা ইত্যাদি পাঠক্রমের বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশিই রোজকার নিত্য নৈমিত্তিক নানা বিষয়ের কথাও শেখানো হচ্ছে সেখানে। সাড়াও মিলছে বেশ ভালোই। বাড়ছে পড়ুয়াদের জ্ঞানের পরিসর, ফলে খুশি অভিভাবকরাও। এছাড়া লোকডাউনের পরও যাতে এই বিষয় গুলির ব্যাপারে ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে এবং শিখতে পারে তার জন্য খোলা হয়েছে একটি ইউটিউব চ্যানেলও। তবে কেবল চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা তুলে দিতে হচ্ছে তাঁদের। সাহায্য করছেন সৌম্য বাবুর কিছু সহকর্মী সহ স্বেচ্ছাসেবীরাও। তাদের সাহায্যেই আগামীদিনেও একইভাবে এই প্রচেষ্টাটি চালিয়ে যেতে চান তিনি। গতানুগতিক গন্ডীর বাইরে বেরিয়ে সৌম্যবাবুর এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদও না জানিয়ে উপায় কী!
Discussion about this post