সালটা ১৯৪৫। পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বছর। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছে আমেরিকা। বোমার আঘাতে কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে দুটো শহর। সরাসরি রেডিয়েশন এবং বোমার পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় মারা গেছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এক কথায় জাপানের রাস্তায় সর্বত্র মৃত্যু আর পোড়া মাংসের গন্ধ। অবধারিত ভাবেই আমেরিকার সেনার কাছে আত্মসমপর্ণ করেছে অক্ষশক্তির অন্যতম বড় শরিক জাপান। আর পৃথিবীর অন্য এক প্রান্তে তখন চলছে আনন্দ উদযাপন। তারই নিদর্শন এই চুম্বন।
একই সঙ্গে যে চুম্বন মানুষের আনন্দ আর নৃশংসতাকে মনে করিয়ে দেয়; বহন করে ইতিহাসের জ্বলন্ত সাক্ষ্য। গ্রেটা জিমার ফ্রিডম্যান এবং জর্জ মেন্ডোসা সেই চুম্বনের আলিঙ্গনেই আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই তাঁদের এই চুম্বনের ছবি পৃথিবীর কাছে শুধু চুম্বন হয়ে থেকে যায়নি। এই চুম্বন দৃশ্য কারো কাছে হয়ে উঠেছে শান্তির বার্তা বহনকারী ছবি, কারো কাছে হয়ে উঠেছে সহানুভূতিহীন, অসংবেদনশীল উল্লাস; আবার কারো কাছে হয়ে উঠেছে ইতিহাস। একে অপরকে একেবারেই না চিনলেও, তাঁদের সেই চুম্বন হয়ে রয়েছে অমর।
১৯৪৫ সালের ১৪ অগস্ট জাপানের আত্মসমর্পণের সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধ শেষের খবর ছড়িয়ে যেতেই, মানুষ নেমেছিলেন রাস্তায়। জাপানের রাস্তায় যখন মানুষের হাহাকার; আমেরিকার রাস্তা তখন হাসি, খুশির উজ্জ্বল রোশনাইয়ে ভরে উঠেছিল। হাজার হাজার যুদ্ধক্লান্ত নিউ ইয়র্কবাসীর মধ্যে ছিলেন যুদ্ধ ফেরত নাবিক জর্জ মেন্ডোসা এবং নার্স গ্রেটা ফ্রিডম্যান। জয়ের আনন্দে ভেসে যাওয়া শহরে হঠাৎ কাছাকাছি এসে পড়েন জর্জ ও গ্রেটা। শান্তির আনন্দ, আবেগ, উচ্ছ্বাস মিলে তৈরি হয়েছিল অপার্থিব মুহূর্ত। সেই সময়েই জর্জ গ্রেটাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করেন।
গ্রেটা পরে জানান, তিনি মোটেও সেই চুম্বনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। সেই চুম্বনের মধ্যেও ছিল না কোনো রোম্যান্স। উলটো দিকে চুম্বনের সেই মুহূর্তেও জর্জের পাশে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর বান্ধবী রিটা। পরবর্তীকালে রিটার সঙ্গেই জর্জের বিয়ে হয়। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারের সেই মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন চিত্রসাংবাদিক আলফ্রেড আইজেনস্টাট। আমেরিকার জনপ্রিয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই ছবি। তবে গ্রেটা ছবিটি দেখেছিলেন প্রায় ১৫ বছর পর, আলফ্রেডের তোলা ছবির সংকলনের বইতে। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কোয়ারে তাঁদের চুম্বনরত মূর্তি তৈরি হয়েছে, যার নাম ‘আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার’। অর্থাৎ, নিঃশর্ত সমর্পণ!
Discussion about this post