খলনায়ক যখন নায়কের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে, তখন কী হয়? সাধারণত আমরা সিনেমায় দেখে এসেছি নায়ক চরিত্র সর্বদা নৈতিকতা ও মানবতার প্রতীক। সমাজের মানুষের কাছে তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত। অন্যদিকে খলনায়ক সমাজের শৃঙ্খলা নষ্ট করতে চায়। নৈরাজ্য বা কেওস সৃষ্টি করাই তার মূল উদ্দেশ্য। নায়ক আর খলনায়কের লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত নায়ক জয়লাভ করেন। নায়কের জয় সবসময় সর্বস্তরের মানুষের কাছে উদযাপিত। মানুষ তাঁকে ঘিরে অনুপ্রেরণা খোঁজে। ছবির শেষে হেরে যাওয়া ভিলেনকে নিয়ে কেউ আর ততখানি ভাবিত থাকেন না। আলোচনা হয় নায়কের কাজ, জীবন, সৌন্দর্য নিয়ে। কিন্তু কখনও উল্টোটা ভেবে দেখেছেন কী? ভাবিয়েছিলেন একজন খলনায়কই। তাঁর নাম হিথক্লিফ এ্যান্ড্রু লেজার। আজ তাঁর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী।
খলনায়ক চরিত্রেরও যে ভালোবাসা প্রয়োজন হয়; মায়া, সহমর্মিতাবোধ, স্নেহ শীতল হাতের প্রয়োজন হতে পারে, কারণ খলনায়কও দিনের শেষে একজন মানুষই- এ কথা অভিনয়ের মাধ্যমে আমাদের ভাবতে বাধ্য করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা হিথ লেজার। তিনি অভিনয় করেছিলেন ক্রিস্টোফার নোলানের পরিচালিত ‘দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজি’র সিক্যুয়েল ‘দ্য ডার্ক নাইট’ ছবিতে ‘জোকার’ চরিত্রে। ২০০৮ সালে ‘দ্য ডার্ক নাইট’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। তার আগেই তিনি মাত্র আঠাশ বছর বয়সে মারা যান, মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত ওষুধ সেবন। ২০০৯ সালে তিনি খলনায়কের এই ভূমিকায় অভিনয়ের জন্যই মরণোত্তর অস্কার পেয়েছিলেন।
জোকার চরিত্রটিকে সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য হিথ হোটেল ঘর ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। চরিত্রটির সূক্ষ্মতম বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরতে তিনি অমানুষিক পরিশ্রম করতেন। মাসের পর মাস নিজেকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতেন। জোকারের চিন্তাধারা লিখে রাখতেন ডায়রিতে। তিনি যেন ‘জোকার’কে একপ্রকার নিজের ভিতরেই লালন করছিলেন। লেজার প্রথম আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে ‘টেন থিংগস অ্যাই হেট অ্যাবাউট ইউ’- ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর আরও কিছু ছবিতে অভিনয় করলেও, ২০০৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম অস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক অ্যাং লি পরিচালিত ‘ব্রোকব্যাক মাউন্টেন’-ছবিতে অভিনয়ের পর প্রভূত প্রশংসা পান।
হিথ বলেছিলেন, “আমার জীবনের নিয়ন্ত্রক আমি, হলিউডের কেউ নয়। মজা পাই বলেই আছি। যেদিন মজাটা আর থাকবে না, সেদিনই চলে যাবো।” তিনি চলেই গেলেন। ক্ষণজন্মা, অথচ কালজয়ী! তবে ২৮ বছরেই তিনি যা দিয়ে গেছেন, শব্দের সাধ্য নেই তাকে বিশ্লেষণ করার। ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল তাঁর জন্ম হয়েছিল। মেল গিবসনের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা সেই ছোট্ট হিথ। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমেরিকা পাড়ি। একের পর এক ছবি। আজ মৃত্যুর এক যুগ পরেও জীবন্ত তিনি। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রকও সেই তিনি নিজেই। কেউ প্রশ্ন করলেই, আজও যেন হেসে বলছেন, ‘Why so Serious?’
চিত্রঋণঃ ক্লাসিকোজ(ফেসবুক মারফৎ)
Discussion about this post