মাটির বিস্কুট (‘ছিকর’)! আজ্ঞে, হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন! শুধুমাত্র খাঁটি মাটির তৈরি এই বিস্কুট। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু এখনও খান। (ছোটবেলায় খেতে দেখেছি, এমনকি নিজেও খেয়েছি) ৭০ এর দশকে, এমনকি ৮০/৯০ এর দশকেও দেশের হবিগঞ্জে/মৌলভীবাজারে প্রচুর পরিমাণে মাটির বিস্কুট পাওয়া যেত, খাওয়া হতো। ওই এলাকার গর্ভবতী নারীদের কাছে এটি পছন্দের খাবার ছিল। তাদের ধারণা ছিল এটি খেলে রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এবং পেটের বাচ্চা সুস্থ থাকবে। যদিও এই ধারণার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা প্রমাণ আছে কিনা তা জানতে পারিনি।
মাটির এই বিস্কুটএখনও পাওয়া যায়, তবে অনেক কম। কেউ কেউ এখনো পেলে খায়। আমাদের এলাকায় (মৌলভীবাজার) পাহাড়ি অঞ্চলে নিম্নবিত্ত হিন্দুরা বসবাস করত। আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে। এদের আমরা ছোটবেলায় ‘ডুকলা’ নামে ডাকতাম। এদের মাঝে মহিলারা এসব ‘ছিকর’ তৈরি করে বাড়ি বাড়ি হেঁটে বিক্রি করত। অন্যদিকে হবিগঞ্জ ও আশে পাশে এলাকায় ও এমন ‘ছিকর’ বানানো হত।
পাহাড়ি টিলায় গর্ত খুড়ে লম্বা বাঁশের সাহায্যে গভীর থেকে বের করে আনা হয় এক ধরণের মিহি এঁটেল মাটি। তারপর মন্ড ও ছাঁচ করে বিশেষ এক পদ্ধতিতে পুড়িয়ে খাবারের উপযোগী করা হয়। তবে মৌলভিবাজার, হবিগঞ্জ ও তার কয়েকটি এলাকার এই মাটির খাবারের স্বাদ ভিন্নভিন্ন। কেউ কেউ মন্ড করার সময় স্বাদ ও ঘ্রাণ আনার জন্য গোলাপ জল, আদার রস ইত্যাদি মিশিয়ে থাকেন। এলাকা ভেদে এদের আকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। গোল, চারকোনা, চেপ্টা ইত্যাদি আকারের। ঐতিহ্য এবং প্রাচীনতার মিশেলে আজও বহাল তবিয়তে রাজত্ব চালাচ্ছে বাংলাদেশের এই মাটির বিস্কুট।
Discussion about this post