শীতের মরসুমে একদিনে ঘুরতে যাবার ঠিকানা খোঁজেন অনেকেই। আর তা যদি হয় গহীন বন, কেমন হবে? কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যেই অরণ্যে বেড়াতে যাওয়ার জন্য রয়েছে বেথুয়াডহরী ফরেস্ট। নদিয়ার এই ফরেস্ট সম্পর্কে কেউ কেউ হয়তো জানেন। তবে যারা এখনও জানেন না তাদের জন্য রইলো এই খবরটি।
বাচ্চা থেকে বড় প্রত্যেকের ভালো লাগার মত একটা জায়গা। এই অরণ্য কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার অধীনে পড়ে। ব্লক হিসেবে এ এলাকা নাকাশিপাড়ার মধ্যে রয়েছে। গোটা এই এলাকা আসলে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। শোনা যায় এক সময়ে এই এলাকায় প্রচুর ‘বেথো’ শাক হতো। সেই থেকে এসেছে ‘বেথুয়া’। আর ‘ডহর’ কথার অর্থ জলাশয়। তো দুইয়ে মিলে ঘর বেঁধে হয়ে উঠেছে আজকের বেথুয়াডহরী। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বরাবর গেলে রাস্তার কাছাকাছি অবস্থিত এ এলাকার ১.২১ বর্গকিমি। প্রবেশ মূল্য জন প্রতি মাত্র ১২০টাকা।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে এই অরণ্যকে প্রথম কাজে লাগানো শুরু হয়। ১৯৫৮-৫৯ সালে এ অরণ্যের সৃজন শুরু হয়। এরপর ১৯৮০ সালে সরকারি অরণ্য হিসেবে ঘোষিত হয় বেথুয়াডহরী ফরেস্টটি। এখানে শাল, পিয়াল, মেহগনি, গাব, অর্জুন, নাগকেশর, পিয়াশাল ইত্যাদি উদ্ভিদ রয়েছে। এতরকম সবুজের সমাহারের কারণেই নানান পশু পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে এই অরণ্য। ময়ূর, মুনিয়া, চন্দনাদের একচেটিয়া রাজত্ব বলা চলে এ বনকে। এছাড়া পশুদের মধ্যে শিয়াল, বনবিড়াল, শুয়োর, বেজী, গোসাপ ইত্যাদি প্রাণীদের বাস। আয়লার সময়ে বিপন্ন সুন্দরবনের এক সারস সেনাজঙ্ঘা আশ্রয় পেয়েছিল এখানে। ক্রমে এ অরণ্য হয়ে উঠেছে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র। খাঁচার মধ্যে রয়েছে একটি নীলগাই। বিশাল এক পাইথনের দেখা পেলেও পেতে পারেন চলতে চলতে। এ অরণ্যের আরও এক বিখ্যাত প্রাণী হলো চিতল হরিণ।
আরও ভেতরে রয়েছে পাখিরালয়। সেটি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামানুসারে রয়েছে আজও। বলা চলে, এক অরণ্যের ভেতরে আরও একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। চাইলে সেখানে সবুজের মধ্যে নিরিবিলি সময় কাটিয়ে আসতেই পারেন। এ অরণ্যের আরও বিশেষত্ব হচ্ছে গোটা অরণ্য সেজে রয়েছে বিভিন্ন মাটির মূর্তি দিয়ে। তাতে বাঘ থেকে শুরু করে রয়েছে ঘড়িয়াল পর্যন্ত সব। হঠাৎ দেখলে মনে হবে একেবারে সত্যি যেন! আবার পুকুর জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে কচ্ছপের মূর্তি। ছোটোদের জন্য রয়েছে মটু -পাতলু কার্টুনের মূর্তি। তবে প্রশ্ন হলো যাবেন কী করে? সোজা রাস্তা। শিয়ালদহ থেকে লালগোলা ট্রেন ধরলে বেথুয়াডহরী সোয়া তিন ঘন্টার পথ। স্টেশন থেকে রিকশা কিংবা টোটো করে অভয়ারণ্যে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। চাইলে থেকেও যেতে পারেন ডব্লিউ এস এফ ডি এ’র দুটি কটেজে। ফরেস্টের গেট দিয়ে ঢুকেই কটেজ। এছাড়াও অরণ্যের ভেতরে রয়েছে বেদুইন নিবাস। অরণ্যপ্রেমী মানুষেরা চাইলে ঘুরে আসতেই পারেন বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য।
প্রচ্ছদ ঋণ – পল্লব শেঠ
Discussion about this post