ঝাড়খন্ডের এক প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামের নারী। ঝাড়খন্ড এবং ওড়িশার সংযোগস্থলে, সারান্ডার জঙ্গলের কাছেই তাঁর জন্ম। ওঁরাও আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে বড় হয়ে ওঠা। বাবা, মা অত্যন্ত সাধারণ মানুষ। আপাত দৃষ্টিতে নাগরিক ‘লাইম লাইট’ থেকে শতহস্ত দূরে অবস্থিত এই নারীর জীবন হওয়ার কথা ছিল তেমনই, যেমনটা আর পাঁচটা আদিবাসী মেয়ের হয়ে থাকে। কিন্তু সেই নারী হয়ে উঠলেন প্রতিবাদী, হয়ে উঠলেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, হয়ে উঠলেন কবি। তিনি জসিন্টা কেরকেট্টা।
প্রকৃতির পূজারী আদিবাসী সম্প্রদায়কে ‘অসভ্য’ বলে মনে করে যে সমাজ, তাকেই বারবার প্রশ্ন করেছেন জসিন্টা তাঁর কবিতার মাধ্যমে। তিনি একজন সাংবাদিকও। তাঁর সাংবাদিকতা শুরু করার পিছনে মূল চালকশক্তিই ছিল আদিবাসী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা। ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি রাঁচির ‘দৈনিক জাগরণ’ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয় সাংবাদিকদের সুচিন্তিতভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়া খবরগুলিকেই তিনি তাঁর লক্ষ্য হিসেবে দেখেছেন। ২০১৪ সালে তিনি ইউএনডিপি থেকে পুরস্কৃত হন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি ভারতীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যারে’র হিন্দি সংস্করণে সাংবাদিকতা করছেন এবং রাঁচির দৈনিক সংবাদপত্র ‘প্রভাত খবরে’র সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন।
২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর টেলিফোনে জসিন্টাকে জানানো হয়, ২০২২ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘ঈশ্বর অর বাজার’ কাব্যগ্রন্থটি “আজতক সাহিত্য জাগৃতি উদ্যম প্রতিভা” সম্মানের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। এই সম্মানের সঙ্গে তাঁকে দেওয়া হবে পঞ্চাশ হাজার টাকার পুরস্কার৷ জসিন্টা সরাসরি এই পুরষ্কার নিতে অস্বীকার করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, মণিপুরের আদিবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে মিডিয়া নীরব থেকেছে ২০০ দিনেরও বেশী, তাঁদের কাছে সম্মান তিনি চাননা। সংবাদমাধ্যমকে জসিন্টা জানিয়েছেন, “যে ভারতে আদিবাসীদের জীবনের প্রতি সম্মান নেই, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও সমানভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, সেই জায়গা থেকে আমার মন ব্যথিত, আমি এই স্বীকৃতির জন্য কোনরকম আনন্দ অনুভব করছি না।’’ তাঁর ‘ঈশ্বর অর বাজার’ গ্রন্থটি ধর্ম, ক্ষমতা এবং আদিবাসীদের সংগ্রামের কথাই বলে।
সাংবাদিকতা, লেখালেখির বাইরে জসিন্টা আদিবাসী কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীদের লেখাপড়াও শেখান। তিনি তাদের লিঙ্গ, সংস্কৃতি এবং ইতিহাস শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। বিভিন্ন আদিবাসী আন্দোলনে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তিনি তাঁর কাজের জন্য বেশ কিছু সম্মাননাও পেয়েছেন দেশ ও বিদেশে। তাঁর লেখাপত্র বিদেশী ভাষায় অনুদিত হয়েছে। ২০২২ সালে তিনি ‘ফোর্বস ইন্ডিয়া’র ভারতের প্রথম কুড়িজন ‘সেলফ মেইড উইমেন’দের একজন হিসেবেও মনোনীত হয়েছেন।
Discussion about this post