মায়ের বিসর্জনের বিষাদ ভুলতে না ভুলতেই প্রস্তুতি শুরু আরেক মায়ের আরাধনার। চারিদিকে সাজো সাজো রব। নতুন ভাবে নতুন উদ্যমে আবার সেজে উঠছে বারোয়ারি পুজোগুলোও। তেমনই এক বারোয়ারি কমিটির পুজো আয়োজিত হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১৫৮ বছর আগে হাওড়ার ডোমজুড়ের দফরপুর গ্রামে। আয়োজক হল দফরপুর মনসাতলা বারোয়ারি কমিটি। এই কমিটির সবচেয়ে বড় আয়োজন হল প্রতি বছর কার্তিকী অমাবস্যায় রক্ষাকালী মায়ের পুজো। একাধিক বিশেষত্বের ছোঁয়ায় এই পুজোর মাহাত্ম্য একেবারে নজরকাড়া। চলুন জেনে নিই সেইসব বিশেষত্বের নিদর্শন।
এখানে নেই দেবীর কোনো স্থায়ী মন্দির। জানা যায়, আগে অনেকেই মন্দির স্থাপনের জন্য সাহায্য করতে চাইলেও বারোয়ারি কমিটির সদস্যরা তাতে রাজি হননি। পুজোর দিনে যে বেদীতে মাকে স্থাপন করা হয়, সেই বেদীই স্থানীয়দের কাছে মন্দির সমান। লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা সেই বেদীর সামনে ভক্তরা মায়ের মাটি কপালে এবং জিভে ঠেকিয়ে পুণ্য লাভ করেন। কথিত আছে, ভক্তি ভরে কিছু চাইলে মা তাকে কখনই ফেরান না। তাই কার্তিকী অমাবস্যার এই তিথির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন সকলেই। এই দিন তারা দন্ডি কেটে, প্রায় ১৮ কিমি হেঁটে ভোরবেলা সালকিয়ার বাঁধাঘাট থেকে গঙ্গাজল নিয়ে আসেন, ধুনো পোড়ান, বুক চিরে রক্ত দেন এবং ছাগ বলি দেন।
কালীপুজোর দিনই সূর্যাস্তের পর শুরু হয় প্রতিমা তৈরি। তারপর গয়না দিয়ে সাজিয়ে বসানো হয় বেদীতে। এখানে ঠাকুরের কোনো ছবি তোলা হয় না–এটাই নাকি এখানকার প্রথা বলে জানান গ্রামবাসীরা।পুজোর শেষে ভোরবেলা সূর্য ওঠার আগেই গ্রামের কাছে বন্দ্যোপাধ্যায় পাড়ার শিউলি পুকুরের ঘাটে দেবীকে ভাসানোর বদলে বসিয়ে রেখে আসা হয়। কথিত আছে, ঘাটে বসানো মাকে দেখলে শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। আগে এরকম প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের। সেই কারণে প্রতিমা মাথায় করে নিয়ে গিয়ে পুকুর ঘাটে বসিয়ে দেওয়ার পর আর কেউ তা দেখেন না। মূর্তি ধীরে ধীরে নিজেই জলে নেমে যায়।
Discussion about this post