“হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল/ কানে তাদের গোঁজা জবার ফুল”- হাতে লাঠি নিয়ে ‘হারে রে রে’ বলে তেড়ে আসে ডাকাত, আর লাল জবা ফুল যে কালী ঠাকুরের প্রিয়, তা কে না জানে! বাংলায় ডাকাতির সঙ্গে কালীপুজো, তন্ত্রসাধনা ও অসংখ্য লৌকিক, অলৌকিক গল্প জড়িত আছে। সেইসব লোককথা, ঘটনা, বিশ্বাস বারবার যুগযুগ ধরে স্থান পেয়েছে বাংলার শিল্পে, সাহিত্যের মধ্যেও। সেইসব বিশ্বাস বা ঘটনার মধ্যে কালীপুজো এবং ডাকাতির সম্পর্কটি অত্যন্ত নিবিড়। বাংলার বহু সুপ্রসিদ্ধ কালী পুজোর ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলারই দুর্ধর্ষ সব ডাকাতদের নাম। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু সুপরিচিত পীঠস্থান নির্মাণের পিছনেও নাম পাওয়া যায় বিভিন্ন ডাকাত দলের। বীরভূম, মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি বর্ধমান, বাঁকুড়াসহ বাংলার বহু কালী পুজো শুরু করে ছিলেন সে সময়ের অন্ধকারের পূজারিরা।
বাংলার ডাকাতের গল্পের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে কালীপুজো। সেই সময় গ্রামেগঞ্জে ডাকাতি হওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। অনেক ডাকাত নাকি আগে থেকে খবর দিয়ে ডাকাতি করতে আসত। ডাকাতদের ‘রন-পা’ পরার প্রচলনও এই সময়েই ছিল। অঞ্চল অনুযায়ী একেক জায়গায় একেকজন ডাকাতের নামে গায়ে কাঁপুনি ধরত মানুষের। এই সব ডাকাতরাই ডাকাতির আগে কালী পুজো করত নিয়মিত। ডাকাতি শেষে ফিরে এসে লুঠ করা সামগ্রী অর্পণ করত দেবীর পায়ে। অনেক জায়গায় আবার দেবীর সামনে নরবলির প্রচলনও ছিল। ডাকাতদের দ্বারা পুজিত এইসব কালীই ‘ডাকাত কালী’ নামে পরিচিত হতেন।
সেই রকমই একটি নিদর্শন হল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের রামনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাণ্ডুক গ্রামের কালী মন্দির এবং কালী পুজো। আউশগ্রামেরই ডাকাত দলের প্রতিষ্ঠিত এই বামা কালী এবং কালী মন্দিরটি ৩৫৩ বছরের পুরনো। এখানে দেবীর ডান পায়ের বদলে বাঁ পা-টি সামনে এগিয়ে থাকে। কার্তিক মাসের অমাবস্যার দিন, ২২ ফুট উচ্চতার মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয়। পাণ্ডুক গ্রামের মেটে পরিবারের পূর্ব পুরুষরাই নাকি সেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ডাকাতদলের সদস্য ছিলেন। তাই সেই প্রচলিত রীতি মেনে আজও এই বামা কালীর পুজোতে পরিবারের সদস্যরা কিছু না কিছু চুরি করে আনেন।
Discussion about this post