মৃত্যুমিছিল অব্যাহত কুনো ন্যাশনাল পার্কে, পাঁচ মাসে মৃত্যু নটি চিতার গত ১৭ই সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে মধ্যপ্রদেশের কুনো অভয়ারণ্যে সুদূর নামিবিয়া থেকে উড়ে এসেছিল আটখানা চিতা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে সেই চিতাশাবকদের খাঁচায় ঢুকিয়েছিলেন। এরপরে গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় আরও বারোটি চিতাকে। কিন্তু ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে নয়টি চিতার। গত মার্চ মাসে কিডনি বিকল হয়ে মারা যায় সূর্য নামের প্রথম চিতাটি। এরপর, এপ্রিল মাস থেকেই কখনো নিজেদের মধ্যেকার হানাহানিতে জখম হয়ে, কখনো আবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে থাকে একের পর এক চিতা। এই তালিকায় রয়েছে সদ্য জন্ম নেওয়া তিনটি চিতা শাবকও। তালিকায় নবতম সংযোজন হল মহিলা চিতা ধাত্রী।
পরিবেশ আন্দোলনকর্মী দ্বৈপায়ন ঘোষ জানিয়েছেন, সুদূর নামিবিয়া থেকে মধ্যপ্রদেশে যে পদ্ধতিতে এই ঠিকানা বদল হয়েছে সেক্ষেত্রে এই প্রকল্পটির ব্যার্থতা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ এটি কেবলমাত্র একটি মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে নয়, একটি গোলার্ধ থেকে আরেকটি গোলার্ধে স্থানান্তরও বটে। বন্যপ্রাণীর এহেন স্থানান্তরের নজির ইতিহাসে এর আগে দেখা যায়নি। জলবায়ু হোক অথবা বনাঞ্চলের প্রকৃতি, সমস্ত দিক থেকেই নামিবিয়া আর মধ্যপ্রদেশের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত। চিতাদের জন্যে ঘাসজমি জাতীয় এলাকাগুলিই উপযুক্ত আবাসস্থল, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের জঙ্গল ঘন গাছপালাতে ভরা। এই গুরুতর পার্থক্যগুলির দিকে চোখ না রেখেই পাবলিসিটি স্টান্টকে পাখির চোখ করে প্রকল্পটি সাজানো হয়েছিল। ফলত, এটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
দু’দশক আগে থেকেই কুনো অভয়ারণ্যকে গুজরাটের সিংহদের দ্বিতীয় বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্পকে সামনে রেখেই উচ্ছেদ করা হয়েছিল সেখানকার ২৪ টি গ্রামের ১৬০০টিরও বেশি পরিবারকে। কিন্তু, সিংহরা অন্য রাজ্যে ঠাঁই জমালে গুজরাটি অস্মিতা আঘাত পাবে, এই ধুয়ো তুলে বছর কয়েক আগে সেই প্রকল্পে জল ঢেলে দেওয়া হয়। পরিবর্তে, চটকদারি বজায় রাখতে সুদূর নামিবিয়া থেকে আনা হয় চিতাদের। কিন্তু, বহু ঢাকঢোল পেটানো সেই প্রজেক্ট চিতার দশা এখন এতটাই বেহাল যে তা পশুবিদদের পাশাপাশি সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়েরও কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে যে, চিতাদের বসবাসের জন্যে রাজস্থান বা অন্য কোনো জায়গার কথা কেন ভাবছে না কেন্দ্র? এখন প্রশ্ন একটাই, নবম চিতার মৃত্যুর পরে প্রশাসনের কী আদৌ টনক নড়ব? চিতাদের কি তুলনামূলকভাবে বাসযোগ্য কোনো এলাকায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে? নাকি টিকে থাকা বাকি বারোটি চিতারও পূর্বসূরীদেরই মতোই পরিণতি হবে?
চিত্র ঋণ – ওয়াইল্ড রথীন
Discussion about this post