কলকাতার গরম থেকে হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে সবাই এদিক ওদিক ঘুরতে যাচ্ছেন। শান্তিনিকেতন থেকে দার্জিলিং কোত্থাও তিল ধারণের জায়গা নেই। অথচ কম খরচে বাঙালি আর যাবেই বা কোথায়? একটু দূরে কোথাও যাবার কথা ভাবলেই পকেটের দিকে তাকিয়ে পিছিয়ে আসতে হয়। তবে আপনি যদি ভ্রমণ বিলাসী হন তাহলে চিন্তা নেই, একবার তোদে ঘুরে আসুন।
ইন্দো-ভুটান বর্ডারের ছোট্ট একটা গ্রাম তোদে। এ জায়গা এখনো ট্যুরিস্টের দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে অনেকটাই দূরে। সবুজ পাহাড়ে ঢাকা ছোট্ট গ্রামটার মধ্যে দিয়ে বয়ে যায় তোদে নদী বা আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলে তোদে খোলা। এই অঞ্চলের সমস্ত গ্রামেরই নামকরণ হয়েছে আঞ্চলিক নদীর নামে। এ নদী আমাদের চেনা নদীর থেকে অনেক আলাদা। পাথরের ওপর দিয়ে ঝর্ণার মতো বয়ে চলে তোদেখোলা, তাংতাখোলা, কেরামখোলা। ভুটান আর ভারতবর্ষের মাঝখান দিয়ে তিরতির করে বইছে তোদেখোলা। চাইলে দুটো ডুব দিয়ে নিতে পারেন। এ নদীতে স্নান করার মজাই আলাদা।
শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে নিউ মাল জংশনে নেমে গাড়ি ঠিক করে চলে যেতে পারেন সোজা তোদে। তবে যদি দু’পয়সা বাঁচাতে চান তাহলে স্টেশন থেকে চালসা বাজার পর্যন্ত টোটো নিয়ে নিন। তারপর চালসা থেকে তোদে চলে যান রুটের গাড়িতে মাত্র দু’শো টাকায়। একবার তোদে পৌঁছে গেলে আর ভাবনা নেই। আপনার সব ভাবনার দায়িত্ব নিয়ে নেবেন নামগিল ভুটিয়া। নিজের গ্রামের শিরা উপশিরাগুলো নিজের হাতের রেখার মতোই চেনে নামগিল দাদা। রিভার ক্যাম্পিং, বর্ন ফায়ার, হাইকিং, বার্ড ওয়াচিং সব কিছুর একেবারে সুবন্দোবস্ত। পাশাপাশি থাকবে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও জনপ্রতি মাত্র ১৫০০ টাকার মধ্যে। ওখানে গিয়ে কোনো বরফে ঢাকা পাহাড় চূড়া দেখতে না পেলেও পাবেন মেঘে ঢাকা সবুজ পার্বত্য উপত্যকা। রহস্য ঘেরা ‘তোদে তাংতা খাসমহলের দরজা খুলে যাবে পাথুরে নদী আর পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে। তোদে থেকে দু কিলোমিটার ট্রেক করে চলে যেতে পারেন তাংতা মনাস্ট্রি। এই মোনাস্ট্রিই ভুটানের আগে ভারতের শেষ গ্রাম। আর তোদে গেলে ওখানকার আঞ্চলিক খাবারের স্বাদ গ্রহণে কোনো কার্পণ্য করবেন না। স্কোয়াশের তরকারি, শুয়োরের মাংসের ঝোল, দেশি মুরগির ঝাল, আর গরম ভাতের মেলবন্ধন কিন্তু লা জবাব।
তবে আর ভাবনা কী, গরমের ছুটিটা ঘুরে আসুন ইন্দো-ভুটান বর্ডারের ছোট্ট গ্রাম তোদে থেকে। শুধু একটাই কথা, বাঙালি ট্যুরিস্টের মতো না, বরং ট্র্যাভেলারের মতন দৃষ্টি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। নিসর্গ যেখানে নিজের সৌন্দর্য্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে শহুরে আবদারগুলো কিছুদিনের জন্য সরিয়ে রাখুন। চেখে দেখবেন নামগিল ভুটিয়ার রান্না করা পাহাড়ি শাক, পান করবেন ঝর্ণার স্বচ্ছ ঠান্ডা জল, হয়তো আপনিও শুনতে পেয়ে যাবেন কোনো পাহাড়ি যুবকের কান্নার সুর। যাবার ইচ্ছে থাকলে যোগাযোগ করে নিতে পারেন নামগিল ভুটিয়ার সঙ্গে। ফোন নম্বর: 9749449230 ।
চিত্র ঋণ – স্বর্ণক সেন
Discussion about this post