বাঁকুড়া জেলার এক গ্রাম সারেঙ্গা। অনেকেই জানেনা গ্রামের নাম। কিন্তু এই গ্রামেরই এক বাসিন্দার জন্য গোটা গ্রাম আজ সবার কাছে পরিচিত। তিনি হলেন গাছ দাদু। কিন্তু কে এই গাছ দাদু? আট বছর বয়সের অন্য ছেলেরা যখন খেলে বেড়াত, তখন তিনি ছোট ছোট চারা গাছ লাগাতেন নিজের উঠোনে। সেই গাছগুলির যত্ন নেওয়া এবং সেগুলিকে গরু-ছাগলের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখা হয়ে ওঠে তাঁর খেলার অঙ্গ। উঠোন ছাড়িয়ে তিনি এলেন এবার চাষের জমিতে। সেখানেও চলল ওনার গাছ লাগানোর খেলা। আর এভাবেই গোটা গ্রাম কখন যে কখন যে সবুজ হয়ে গেছে বুঝতেই পারেননি সারেঙ্গার শ্যামাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়।
৮ বছরের সেই বালক এখন ৮০ বছরের বৃদ্ধ। কিন্তু তাঁর গাছ লাগানোর নেশা এখনও কাটেনি। এখনও সময় পেলেই হাতে একটি কোদাল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গাছ লাগানোর জন্য। একটু বড় হতে তিনি বুঝতে পারেন তাঁর একার পক্ষে এত বড় এলাকা জুড়ে লাগানো গাছকে রক্ষা করা অসম্ভব। তাই তিনি এবার এমন কিছু গাছ লাগাতে শুরু করেন যে গাছগুলোকে সহজেই প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচানো যাবে। তাই সারেঙ্গার বেশিরভাগ এলাকা জুড়েই আছে তালগাছ। সব তিনি একাই লাগিয়েছেন আর তাই তিনি ‘গাছ দাদু’ নামেই পরিচিত।
এই মহৎ কাজ তিনি করলেও তিনি সেরকম ভাবে না পেয়েছেন খ্যাতি বা স্বীকৃতি। কিন্তু তাতে তাঁর কিছু এসে যায়না। কোনো কিছুই তাঁকে গাছ লাগানো থেকে থামাতে পারেনি। বর্তমানে একদল তরুণ ও কচিকাঁচার দল যোগ দিয়েছে ওনার সঙ্গে। যারা “গ্রিন আর্মি” নামে পরিচিত। কচিকাঁচার দল তাঁকে তাদের ক্যাপ্টেন হিসাবে দেখে। শ্যামাপ্রসাদ বাবু ছোটবেলাতেই তাঁর বাবার থেকে জানেন গাছ লাগানোর উপকারিতা। আর তখন থেকেই এখনও পর্যন্ত তিনি গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে থেমে নেই। গাছ লাগানোর জন্যই তিনি প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বাঁকুড়া জেলাশাসকের থেকে পুরস্কার পান।
Discussion about this post