কথায় বলে ভালোবাসা কোনও বাধা বা নিয়ম মানে না। ভালবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর মানবিক অনুভূতি, এক আবেগকেন্দ্রিক অভিজ্ঞতা। কোনো বিশেষ ব্যক্তির প্রতি এক অদৃশ্য টানই হল ভালবাসা। তবে কোনও মৃত মানুষের শরীরের প্রতি ভালোবাসা জন্মানো!! শুনতে অসম্ভব লাগলেও, সবাইকে চমকে দিয়ে এমন ঘটনাই ঘটেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন চিকিৎসক ভালবাসার টানে কবর থেকে তুলে আনেন প্রেমিকার মৃতদেহ। মৃত প্রেমিকার সাথে কাটিয়েছিলেন দীর্ঘ সাত বছর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একজন প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ছিলেন কার্ল টেঞ্জলার। যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসক হিসেবে যথেষ্ট নামডাক ছিল তাঁর। কিন্তু ইতিহাসের নথিতে তিনি ‘ডক্টর ডেথ’ নামেই অধিক পরিচিত। তবে তার এই অদ্ভুত উপাধির পেছনে ছিল এক রোমহর্ষক কাহিনী। মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত এক নারীকে স্বপ্নে দেখতেন কার্ল। বহুবার সেই একই নারীকে স্বপ্ন দেখায়, একটা সময়ের পর কার্ল ধরেই নিয়েছিলেন ওই নারীই তাঁর জীবনসঙ্গিনী। তবে অনেকেই তাঁর এই দাবি, মনের ভুল বলে উড়িয়ে দিত। তবুও নিজের বিশ্বাসে অটল ছিলেন কার্ল।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কার্ল একজন বিশিষ্ট হয়ে উঠলেও, সেই নারীর কথা সে কখনও ভুলতে পারেননি। বেশ কিছু বছর পর হঠাতই তাঁর কাছে চিকিৎসার জন্য আসেন যক্ষ্মায় আক্রান্ত মারিয়া এলেনা নামের এক মহিলা। বছর একুশের মারিয়া এলেনার মধ্যে নিজের স্বপ্নে দেখা নারীর হুবহু মিল খুঁজে পায় কার্ল। অনেক চেষ্টা করেও মারিয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মারিয়ার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন কার্ল। কার্ল ঠিক করেন এলেনার মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আনবেন। তারপর বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর শরীরে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করবেন। গোপনে, মৃতদেহটিকে কবর থেকে তুলে এনে দীর্ঘ সাত বছর সেই মৃতদেহের সঙ্গেই কাটিয়েছেন কার্ল।
এই সাত বছরে মৃতদেহে প্রাণ ফেরাতে বহু পরীক্ষা করেছিলেন তিনি। মৃত শরীর থেকে দুটো চোখ তুলে তার বদলে কাচের চোখ বসিয়েছেন, মুখের উপর বসিয়েছেন মুখোশ। ঘটনাটি জানতে পেরে পুলিশের দারস্থ হন কার্লের বোন। পুলিশ এসে এলেনার মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করে পুনরায় সেগুলিকে কবর দেন। আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছিলেন কার্ল। যক্ষ্মা চিকিৎসা ক্ষেত্রে তার অবদানের কথা মাথায় রেখে, রেহাই দেওয়া হয় তাকে। আধুনিকতার যুগে ভালোবাসা আজ মুঠে ফোনে বন্দি হতে বসলেও, ভালবাসার এই গৌরবময় কাহিনীগুলি আজও শেষ আশা বাঁচিয়ে রাখে।
Discussion about this post