শীতের আমেজে একদিনের পিকনিক হোক বা গরমের হাসফাঁস থেকে রেহাই পেতে হাওড়ার শ্যামপুর ব্লকের গাদিয়াড়া দিনে দিনে হয়ে উঠেছে পর্যটকদের বেশ পছন্দের এক জায়গা। যারা একটু শান্ত নিরিবিলি জায়গায় দুদিন কাটাতে পছন্দ করেন তাদের ভ্রমণের তালিকায় হাওড়া থেকে গাদিয়াড়া থাকতেই পারে। কারণ রূপনারায়ণ, ভাগীরথী এবং হলদি–এই তিন নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত গাদিয়াড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বরাবরই হাতছানি দেয় পর্যটকদের। কিন্তু ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো হাওড়া জেলার ইতিহাস। কতশত অজানা ইতিহাস যে কত জায়গায় লুকিয়ে রয়েছে তার হিসেব মেলা ভার। আমরা কমবেশি অনেকেই গাদিয়াড়া গেছি প্রকৃতির কোলে সময় কাটাব বলে। অনেকেই জানে না এক টুকরো ইতিহাস আজও উঁকি দেয় গঙ্গাবক্ষে। চলুন জেনে নিই সেই ইতিহাস।
গঙ্গার বুকে উঁকি দেওয়া সেই ইতিহাসের সাক্ষী হল ফোর্ট মর্নিংটন ও লাইট হাউস। অনেকেই ভেবে অবাক হবেন যে সেখানে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের শোভা দেখা হয়েছে, কিন্তু কোনো দুর্গের দেখা তো মেলেনি! আসলে শুধুমাত্র ভাটার সময় দিনে দুবার দেখা মেলে জলের তলায় তলিয়ে যাওয়া দুর্গের ভগ্নাংশ বা সুড়ঙ্গপথটুকুর। আবার জল বাড়লেই ঝুপ করে ডুব দেয় সে। হাওড়ায় মোট দুটি পুরনো দুর্গ রয়েছে। শিবপুরের টানা দুর্গ আর এই মর্নিংটন দুর্গ, যেটি তৈরি করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতার সূর্য হরণকারী লর্ড ক্লাইভ। মূলত শত্রুবাহিনীর রণতরী, জাহাজ–এসব নখদর্পণে রাখবেন বলেই ভাগীরথী ও রূপনারায়ণের সঙ্গমস্থলে তৈরি করেছিলেন এটি।
আরও জানা যায় যে ক্লাইভ এই দুর্গে বসেই ফরাসি ও ওলন্দাজ নৌকার ওপর নজরদারি চালাতেন। বাণিজ্যের জন্য সুন্দর এই নদীপথ তাদেরও খুব পছন্দের ছিল। রাতে লাইট হাউস থেকে সার্চ লাইট ফেলেও নজর রাখা হত। তবে পরবর্তীকালে এই দুই বাহিনী ক্ষমতা হারালে ইংরেজরাও আর এই দুর্গের কদর করেনি। ইংরেজদের সময় থেকেই পরিত্যক্ত এই দুর্গটি ছিল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার দিকে। ১৯৪২ সালে ভয়াবহ এক সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই দুর্গ। অবশ্য নদীর তীরে ভাঙনের ফলে দুর্গের ভাঙা কিছু অংশও মাঝনদীতে বেরিয়ে আসে।
অনেকেরই হয়তো ঘুরতে গিয়ে চোখে পড়েছে মাঝ নদীতে চড়ার মত ভেসে ওঠা একটুকরো জমি। তবে তাতে সেভাবে কিছু বোঝার উপায় নেই। গাদিয়াড়াকে এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি পক্ষ থেকে নদীর পাড়কে সাজানো হয়েছে অবশ্যই। তবে তলিয়ে যাওয়া এই ইতিহাসকে শেষরক্ষা করতে এখনও পর্যন্ত তেমনভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই জলে থেকে থেকেই হয়তো একদিন মিলিয়ে যাবে ক্লাইভের তৈরি ঐতিহাসিক এই মর্নিংটন দুর্গ।
চিত্র ঋণ – অধিরথ দে
Discussion about this post