“এ সুযোগ পাবে না আর, বলো ভাই কি দাম দেবে, পুতুল নেবে গো পুতুল।” শ্যামল মিত্রের এই গানটির মত পুরনো দিনের সেই পুতুল খেলাও আজ আমাদের কাছে শৈশবের নস্টালজিয়া। নেই আর সেই পুতুলের সংসার সাজিয়ে দেওয়া। পুতুলের বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় গ্রাম বাংলার সেই ছোট্ট খুকিটার নেই আর সেই অঝোরে কান্না। শৈশবের পুতুল খেলার মাহাত্ম্য থেকে বলা যায় আধুনিক যুগের শিশুরা অনেকটাই বঞ্চিত। তবে হ্যাঁ, মাটির পুতুলের সেই বৈচিত্র্য এখনও বেঁচে আছে নদিয়া, ঘূর্ণির বিখ্যাত সব মৃৎশিল্পীদের হাতের জাদুতে। সেই ঐতিহ্য আজও সাড়া জাগায় পর্যটকদের মনে। এই মাটির পুতুলগুলির স্বাদ যদি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই কলকাতার বুকেই পাওয়া যায়, তাহলে কেমন হয় বলুন তো? চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই এক শিল্পীর রোজনামচার কাহিনী।
উত্তর কলকাতার নিমতলা-জোড়াবাগান অঞ্চলে অনাদরে পড়ে থাকা এক অখ্যাত শিল্পী হলেন কেষ্ট পাল। বেশ ঘিঞ্জি জোড়াবাগান অঞ্চলের হরলাল দাস লেন নামক এক গলিতে তার বাস। আর এখানেই তার ব্যস্ততার শেষ নেই। ছোট্ট এক কামরার ঘরে দারিদ্র্যতার হাত ধরেই চলছে শিল্পীর আঙুল পুতুল তৈরির কাজ। ঘরে ঢুকলেই চারিদিকে রাশি রাশি মাটির পুতুল। দাম শুনলেও অবাক হওয়ার মত। ৫টি পুতুলের একটি সেটের দাম মাত্র ১০০ টাকা। ব্যস্ত শহরের বুকে নদিয়া ঘূর্ণির ধাঁচে এমন সব পুতুলের সম্ভার সাজিয়ে চলেছেন এই কারিগর এবং তার সহধর্মিণী সুমিত্রা পাল। স্বামীর সঙ্গে তারও যেন দম ফেলার ফুরসত নেই! তবে তাদের এই শিল্প কিন্তু শুরু হয়েছিল অনেক কাল আগেই, কেষ্ট পালের দাদুর হাত ধরে।
উত্তর প্রদেশ থেকে কাজের সন্ধানেই তিনি এসেছিলেন কলকাতায়। নিমতলায় থাকাকালীন খুব অদ্ভুত ভাবেই উত্তর ভারতীয় এই ব্যক্তি মৃৎশিল্পের মধ্যেই জীবনের ছন্দ খুঁজে পান। তবে আশেপাশের শিল্পীদের কাছ থেকে শেখা মাটির শুধু মূর্তি বা জিনিস তৈরিতে খুব অল্পদিনেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তাই শুরু করেন মাটির আঙুল পুতুল গড়ার কাজ। হাতের নিখুঁত ছোঁয়ায় যেন প্রাণ পায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চির সেই পুতুলগুলি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও তাই বিষয়- সম্পত্তির বদলে রেখে গেছিলেন তার হাতের তৈরি অমূল্য সেইসব ছাঁচ। আর সেই পরম্পরাই বয়ে নিয়ে চলেছেন এই দম্পতি। তবে পরিশ্রমের দাম আর মেলে কই! তাছাড়া ধৈর্য্যের অভাব ও বাজারে চাহিদার অভাবে হয়তো তাদের বংশধররাও এই শিল্পের কদর করবে না- এমনটাই আশঙ্কা শিল্পীর। তবে যাই হোক, ঐতিহ্য বলে তো একটা ব্যাপার আছেই! তাই শত দারিদ্র্যতার মাঝেও জীবন যুদ্ধে হার না মেনে দিন রাত সৃষ্টি করে চলেছেন বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – Purono Kolkatar Golpo এবং পুরনো কলকাতার গল্প সোসাইটি
Discussion about this post