বড়দিনের মরশুম। প্রতিবছর উৎসবপ্রিয় বাঙালি সামিল হন বছরের এই শেষ উৎসবের আনন্দে। বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন জায়গাতে তোড়জোড় চলে পুরোদমে। বছরের শেষ উৎসব বলে কথা! বাদ পড়ে না উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিও। বিভিন্ন রকম প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন উত্তরবঙ্গের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। অন্যান্য জায়গার মত শিলিগুড়ি শহরটাও সেজে ওঠে রঙিন আলোকসজ্জায়। শহরের গির্জাগুলি তো রয়েছেই, সাথে হিলকার্ট রোড থেকে শুরু করে সেবক রোড, বিধান রোড- সবজায়গাতেই টের পাওয়া যায় উৎসবের আমেজ। নতুন ইংরেজি বর্ষবরণ না হওয়া পর্যন্ত গোটা শহরই আলোর রোশনাইতে একেবারে রঙিন।
উত্তরবঙ্গে খ্রিস্টানরা প্রস্তুতি নেন নিজেদের ঐতিহ্যকে স্মরণ করে। আমাদের সকলের কাছে বড়দিন মানেই কেক। সেই কেকেরও রকমফের সব রেসিপি। যেমন ধরুন, এক কেজি ময়দায় ১৬ টি ডিম, ৫০০ গ্রাম বাটার, ৮ কাপ চিনিগুঁড়ো, ভ্যানিলা ৮ চামচ নিয়ে প্রয়োজন মত কিসমিস, কাজু, মোরব্বা, চেরি, টোটোমোটো, বেকিং পাউডার মিশিয়ে তারা তৈরি করেন সাধারণ কেক। ছোট, মাঝারি ও বড়- বিভিন্ন মাপের সাধারণ কেক। এখানেই শেষ নয়, সাথে আছে একধরনের বিশেষ রোজ কেক। এই কেক বানাতে এক কেজি ময়দায় ১২টি ডিম, বেকিং পাউডার, চিনি ও সাথে সাদা তেল বা বাটার ভালোভাবে মিশিয়ে এক একটি পাতলা গোলা তৈরি করতে হবে। তারপর সেগুলিকে ভেজে নিলেই তৈরি রোজ কেক। কেকের পাশাপাশি তৈরি করেন সুস্বাদু ডোনেট, সুজি আর নারকেল দিয়ে আনন্দনাড়ু, চালের গুঁড়ো দিয়ে চন্দ্রপুলি। খাবারের বিভিন্নতার আর শেষ নেই!
আবার জানেন! আদিবাসী খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন চালের গুঁড়ো, চিনি, গুড়, কাজু বাদাম, কিসমিস দিয়ে একধরনের সুস্বাদু পদ তৈরি করেন, যার নাম হল পরব রুটি। প্রতি ঘরে ঘরে তৈরি করেন তারা। শুধু কী তাই! অভিনবত্বের স্বাদ এনে মাদল, ঢোলক নিয়ে গানের মাধ্যমে ক্রিসমাস ক্যারলেরও জোরদার আয়োজন করেন তাঁরা।যীশুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সম্পূর্ণটা ফুটিয়ে তোলা হয় চার্লি সেটের মাধ্যমে আর সেই চার্লি সেটের মধ্যে থাকে ছোট্ট যীশু পরি থেকে শুরু করে নানান জিনিস। তাই জোর কদমে চলছে চার্লি সেট তৈরির প্রস্তুতি। চার্লি সেট প্রস্তুতকারক এক শিল্পী জানান, প্রতি বছরই ক্রিসমাসে সময় প্রচুর অর্ডার আসে এই চার্লি সেটের। মূলতঃ ১৪ পিসের একটি সেট হয়। এগুলি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে পাইকারি দরে বাজারে বিক্রি হয়। আদিবাসী খ্রিস্টান সমাজের অনেকের ঘরে ঘরে প্রভু যীশুর মূর্তি দিয়ে ছোট গোশালা তৈরি করেন। একে তাঁরা ‘চোরনি’ বলে থাকেন। আসলে বড়দিনের এই আনন্দ উৎসবে ভাসেন গোটা শিলিগুড়ি শহরের মানুষজন।
চিত্র এবং তথ্য ঋণ – বঙ্গদর্শন
Discussion about this post