মোঘল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকেই যশোর শহরে চলে আসছে পতিতাবৃত্তি। ব্রিটিশ যুগে শহরের তিনটি স্থানে বর্তমান ইডেন মার্কেট ও শিল্প ভাণ্ডারের পিছনে গড়ে ওঠে প্রথম শ্রেণীর পতিতা পল্লী। কাঁঠালতলা পতিতা পল্লী, হোটেল মিড টাউন ও মাড়োয়ারী মন্দিরের মাঝে মাড়োয়ারী বাবুদের প্রয়োজনে গড়ে ওঠে দ্বিতীয় শ্রেণীর গণিকালয়। ঝালাইপট্টির পুরনো ছাগল-হাটার দক্ষিণে গড়ে ওঠে তৃতীয় শ্রেণীর পতিতাপল্লীটি। শহরের অভিজাত শ্রেণীর মানুষরা যেতেন কাঁঠালতলা পল্লীতে। ইতিহাস সাক্ষী বর্তমান জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের বাংলো ছিল তৎকালীন জমিদারদের বাঈজী খানা। কলকাতার বাবুরা এখানকার গণিকালয়ে থাকতেন। বিষয়টি সেই সময় কেউ খারাপ চোখে দেখতেন না।
এই বাঈজী খানা সপ্তাহে দু’দিন কলকাতা থেকে ৮ ঘোড়ার ফিটন গাড়িতে চড়ে আসতেন জমিদার ব্যারিস্টার মন্মথনাথ রায় ও তার সঙ্গীরা। শনিবার আধা বেলা এবং রবিবার সারাদিন ফূর্তি করে তিনি চলে যেতেন ফের কলকাতায়। সে সময়ে ঐ বাইজিখানায় মেয়ের যোগান দেওয়া হত চাঁচড়া রায়পাড়ার ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে। জানা যায় কখনও টাকা দিয়ে কখনও জোর করে ওই মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হত বাইজিখানায়। যে পরিবারের এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই।
যশোর শহরের ভৈরব নদের পাড়ে এখনও বাবুঘাট রয়েছে। সেখানে তারা কলকাতা থেকে থেকে এসে নামতেন। শিবনাথ শ্রাস্ত্রীর লেখা, ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ’ বইতে লেখা রয়েছে -“সে সময়ের যশোহর নগরের বিষয়ে এরূপ শুনিয়াছি যে, আদালতের আমলা, মোক্তার প্রভৃতি পদস্থ ব্যক্তিগণ কোনও নবাগত ভদ্রলোকের নিকটে পরস্পরকে পরিচিত করিয়া দিবার সময়ে -‘ইনি ইহার রক্ষিত স্ত্রীলোকের পাকা বাড়ী করিয়া দিয়াছেন’, এই বলিয়া পরিচিত করিতেন। রক্ষিতা স্ত্রী-লোকের পাকা বাড়ী করিয়া দেওয়া একটা মানসম্ভ্রমের কারণ ছিল।” যশোরের ডেপুুটি কলেক্টর নবীন চন্দ্র সেন ‘আমার জীবন’ গ্রন্থে এবং গিরিশ চন্দ্র নাগ তার বই ‘ডেপুটির জীবন’ বইতে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যশোর রেল রোডের এই বাড়িটি (আগের ছবি) ছিল লীলাবতী সেন নামের এক রক্ষিতার। কলকাতার এক বাবু তাকে এই বাড়িসহ পাশে আর একটি বাড়ি তৈরি করে দিয়ে ছিলেন। মোঘল আমল থেকে এখনও এই গণিকালয়গুলো চালু আছে।
Discussion about this post