রাজ্য তথা গোটা দেশেই চলছে তৃতীয় দফার লকডাউন। এরই মধ্যে যে কত অভুক্ত পেট তিলে তিলে যন্ত্রণা চেপে দিন কাটিয়ে চলেছে তার ইয়ত্তা নেই। সরকারি ত্রাণ ঘোষিত হলেও সব জায়গায় এসে পৌঁছচ্ছেই বা কই! ফলতঃ দিন-আনি-দিন-খাই মানুষগুলির দিন-গুজরান এখন অনিশ্চয়তার মুখেই। ঠিক এমন কঠিন সময়েই এগিয়ে আসছেন কিছু স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীর দল। নিজেদের উদ্যোগে ও স্থানীয় মানুষের সাহায্যে তারা পাশে থাকছেন দুর্গতদের। সেই ছবি এবার দেখা গেল হুগলীর নালিকুলেও।
দেশে লকডাউন ঘোষণার পর পরই নালিকুলের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী আশেপাশের এলাকা ঘুরে মানুষের সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। বিশেষতঃ প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খাবার ও শারীরিক অসুস্থতার মতো কিছু ক্ষেত্রে মানুষগুলি সঠিক সাহায্য পাচ্ছেন কি না সেগুলোও নজরে রাখে তারা। তাদের সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে মোট চার দফায় তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় ছাত্রছাত্রীর দলটি। একদম প্রথমেই ছিল, স্বল্প দামে হু’র নির্দেশিকা মেনে স্যানিটাইজার বানানো। এরপর সেগুলিকে বিনামূল্যে না হলেও, খুবই ন্যূনতম মূল্যে পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রামের মানুষ ও আশাকর্মীদের কাছে। দ্বিতীয় দফায় গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে সার্ভে করে সামর্থ্য মত চাল, ডাল, নুন, হলুদ, তেল, লঙ্কাগুঁড়ো ও ডিম সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। আটকে পড়া বহু পরিযায়ী শ্রমিকদের মুখেও তুলে দেওয়া হয় খাবার। এরপর শুরু হয় রেশন সিস্টেমের গোলমাল নিয়ে কথা বলার কাজ। প্রশাসনের কাছে গ্রামের দুঃস্থ মানুষদের সমস্যাগুলিকে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসও নেওয়া হয়। চতুর্থ ও শেষ দফায় সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ নেন তাঁরা। লকডাউনের বাজারে চলছে ওষুধের চরম কালোবাজারি। বিশেষ করে সুগার বা প্রেশারের ওষুধের চাহিদা প্রায় আকাশছোঁয়াই বলা চলে। এই সব বাধা এড়িয়ে চাহিদামতই মানুষের ঘরে ঘরে তাঁরা পৌঁছে দেন প্রয়োজনীয় ওষুধ। এর সঙ্গেই করেন গর্ভবতী, প্রসূতি মহিলাদের খেয়াল রাখার কাজও।
নালিকুলের ছাত্রদলটির মানবিক এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে তাঁরা পাশে পেয়েছেন তাঁদের বন্ধু, শিক্ষক, দাদা-দিদি, অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। সকলের থেকে অর্থ সাহায্য সংগ্রহ করে তা দিয়েই উদ্যোগটি সফল করার সাহস দেখাতে পেরেছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, দূরত্ব হোক শারীরিক। মানসিক বা সামাজিক নয়। তাই ‘সামাজিক দূরত্ব’-এর মিথ্যে ভেঙে সত্যি হয়ে উঠেছে ‘শারীরিক দূরত্ব, সামাজিক সংহতি’র স্লোগান। ভয়ানক ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়েও তাই আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
Discussion about this post