বর্ষার ভেজা দিনগুলোর শেষে, আকাশে ভেসে চলা তুলোর মতো মেঘ আর হালকা মিষ্টি হাওয়া জানিয়ে দেয় যে শরৎ আসছে। শরৎকালের সাথে বাঙালির সম্পর্ক আত্মার। এই সময়েই ধরাধামে আসেন মা দুর্গা। বাংলা তথা প্রবাসের সকল বাঙালিরা সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন এই সময়ের জন্য। তবে উৎসব প্রিয় বাঙালির পাশাপাশি সারা বঙ্গের বহু মৃৎশিল্পীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন এই উৎসবের। অভাব কাটার আশায় মাতৃমূর্তি তৈরিতে ঘর ছেড়ে রাজ্যের বাইরে পাড়ি দেন বর্ধমানের বহু মৃৎশিল্পীরা।
পূর্ব বর্ধমানের একটি জনপদ পূর্বস্থলী। কাটোয়া হাওড়া রেল লাইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন এটি। সেখানকারই ১ নং ব্লকের জাহান্নগরে বসবাস বহু মৃৎশিল্পীদের। পুজোর আগের এই মরসুম তাঁদের যে ব্যস্ততায় কাটে, তা কল্পনা করা স্বাভাবিক। এই অঞ্চলের শিল্পীদের মধ্যে এক আশ্চর্যের বিষয় লক্ষ্য করা যায়। তারা পুজোর প্রায় দু’মাস আগেই শেষ করে ফেলেন প্রতিমা তৈরির কাজ। শুনতে অবাক লাগলেও, এর পেছনে রয়েছে এক অভাবের কাহিনী। এখানকার মৃৎশিল্পীরা মূলত প্রতিমা তৈরির উপরই নির্ভরশীল। ফলে তারা জাহান্নগরে প্রতিমা তৈরি প্রায় সেরে পাড়ি দেন উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে। সেখানে জায়গা ভাড়া নিয়ে, মূর্তির কাজে লাগেন। প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে কাজ চলে। তাতেই সেখানকার আয়ে কিছুটা স্বচ্ছলতার মুখ দেখেন তারা। জাহান্নগরে একটি প্রতিমা বিক্রি করে যা আয় হয়, প্রবাসে তার প্রায় দ্বিগুণ আয় করেন শিল্পীরা।
এই অঞ্চলের মৃৎশিল্পীদের মতে, “বড় রকমের উপার্জনের জন্য দুর্গাপ্রতিমা তৈরি ছাড়া গতি নেই। কিন্তু স্থানীয় এলাকায় প্রতিমা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা যথেষ্ট নয়। ফলে কাজের জন্য প্রবাসে পাড়ি দিতেই হয়।” পুজোর দু’মাস আগে মূর্তি তৈরী হলেও পুজোর দিন সাতেক আগে তারা ফিরে এসে তাতে রং ও চক্ষুদান সম্পূর্ণ করেন। তাদের হাতের কাজ সারা বর্ধমানে প্রশংসনীয়। ফলে তৈরীর পর মূর্তি পৌছে যায় পূর্বস্থলী সহ আশেপাশের বহু জায়গায়। এভাবেই ঘর ও বাইরে দুই-ই সামলাচ্ছেন জাহান্নগরের শিল্পীরা, একটু ভাল থাকার আশায়। সময়ের সাথে প্রবাসে দুর্গাপুজোর চল ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে। তার ফলে আখেরে লাভই হয়েছে তাঁদের। পুজোর মরশুমের একটু বাড়তি আয় কিছুটা স্বস্তির স্বাদ পান তারা। এ যেন দশভূজার উৎসবে, দশভুজার হাত ধরেই তাদের অভাব কিছুটা কাটে।
চিত্র ঋণ – সম্রাট ঘোষ
Discussion about this post