সিনেজগত বরাবর সমৃদ্ধ হয়েছে প্রতিভার অসামান্য আগমনে। শিল্পীকে মানুষ মনে রেখেছে তার অভিনয় দক্ষতার জন্য। সত্তর আশির দশক। সিনেমা বলতে মানুষ বুঝতো ট্র্যাজেডি বা রোম্যান্স। ‘ঢাকার পোলা’ ভাঙলেন এহেন ধারনা। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ বা ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’! ভানুর কমেডিতে হাউসফুল হতো প্রেক্ষাগৃহ। কৌতুক শিল্পকে তখনও নিছক ভাঁড়ামো মনে করা হতো। তেমন সম্মান পেতেন না কৌতুকাভিনেতারা। এই সময়ের দিকপাল ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌতুকশিল্পের উত্তমকুমার। আসল নাম সাম্যময় বন্দোপাধ্যায়। ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মেছিলেন এই কিংবদন্তী। ১৯৪১ সালে কলকাতা আসেন। চাকরিজীবন শুরু করেন আয়রন ও স্টিল কোম্পানিতে। ভীষণ রোগা ছিলেন সাম্যময়। পরিচালক তাঁকে দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের চরিত্র দেন। জীবন এসময় তাঁর সাথেই কমেডি করে। ছেঁড়া বস্তা পরিহিত অবস্থায় দেখা হয় নববিবাহিত স্ত্রী ও শ্বশুরের সাথে।
বিয়ে করেছিলেন নিলীমা মুখোপাধ্যায়কে। তিন সন্তান নিয়ে ভরা সংসার। বাস্তব জীবনকেও মুড়েছিলেন কৌতুকের মোড়কে। বর্ষায় বারবার ছাতা হারাতেন তিনি। তাই নিয়ে লাগত দাম্পত্য কলহ। হঠাৎ একদিন দরজা খুলে স্ত্রী দেখেন, সামনে অসংখ্য ছাতার ভিড়। স্ত্রী তো অবাক, চোখ কপালে পড়শিদেরও। চাপের মুখে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অবশেষে খুললেন মুখ। বললেন তিনি দিয়েছিলেন বিজ্ঞাপন। কী ছিল সেই বিজ্ঞাপন! সেটি ছিল, “আমি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, ১২/১ সরকার স্ট্রিট, গোল পার্ক, কলকাতায় থাকি এবং নিয়মিত কাজে ১২ই নম্বর ট্রামে যাতায়াত করি। আমি আনুমানিক গত ৭ দিনের মধ্যে দুটি ছাতা হারিয়েছি এবং যারা এ দুটো ছাতা নিয়েছেন তাদের আমি চিনি। যদি আগামী ৩ দিনের মধ্যে এগুলো ফেরত না দেন তাহলে আগামী রবিবার এই পত্রিকায় তাদের নাম-ঠিকানা সব ছেপে দেবো।” বুঝুন তবে। কৌতুককে মানুষ কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে।
এই দাপুটে অভিনেতা, সেসময়ের উত্তম সুচিত্রা জুটিকেও টক্কর দিতেন। প্রাথমিক জীবনে বিপ্লবের সাথে ছিল তাঁর প্রত্যক্ষ যোগ। ব্রিটিশের ওপর নজরদারি করতেন গোরুর গাড়ি চেপে। গাড়োয়ানরা কুট্টি ভাষায় কমেডি করতো। তাদের সাঙ্ঘাতিক ‘সেন্স অফ হিউমার’ আর উইট ছিল অভিনেতার কৌতুকশিল্পের রসদ। আঙ্গিক ও বাচিক দুই অভিনয়েই ছিল তাঁর তীব্র পরিমিতিবোধ। পরিচালকরা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করেন। তৈরী করেন ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট’ ও ‘ভানু পেল লটারি’র মতো ছবি। নিজের নাম নিয়ে কৌতুকমত্ত সাম্যময় মনে করতেন সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁদেরও দায়িত্ব ও অস্তিত্ত্ব আছে।
Discussion about this post