বিশ নয়, লোকজন বলছে এই বছরটা বিষ। এই মতের মধ্যে অবশ্যই কুসংস্কার লুকিয়ে আছে। যদিও তার সাথেই রয়েছে শিল্প ও ক্রীড়া জগতের প্রতি মানুষের অগাধ ভালোবাসা। কারণ এই বিশ সালেই পরপর ঘটে গেল ইন্দ্রপতন। প্রথমে অভিনেতা ইরফান খান, তারপর ঋষি কাপুর, তাদেরই পথ অনুসরণ করেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার সুবিমল গোস্বামী। মানুষের হৃদয়ে যার নাম চুনী গোস্বামী।
গোটা দুনিয়ার কাছে তিনি একজন ফুটবলার। কিন্তু চুনী বাবু হৃদয় থেকে ছিলেন একজন সত্যিকারের ক্রীড়াপ্রেমী। একাধিক খেলার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। সঙ্গী ছিল একই রকম দক্ষতা। ক্রীড়াজগতে তিনি ছিলেন সব্যসাচী। একদিকে ফুটবলে এশিয়ান গেমসের সেমিফাইনালে জোড়া গোল করছেন। অন্যদিকে, ক্রিকেটে বল হাতে রোহন কানহাইয়ের মতো ক্যরিবিয়ান ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠাচ্ছেন। একদিকে ফুটবলে দেশের অধিনায়ক হিসেবে এশিয়ান গেমসে সোনা, অন্যদিকে ক্রিকেটে বাংলার অধিনায়ক হিসেবে দলকে নিয়ে যাওয়া রঞ্জি ফাইনালে। এমন অবিশ্বাস্য নজির ভারতীয় খেলাধুলোয় তো নেই-ই, আন্তর্জাতিক ক্রীড়ামহলেও বিরল।
ফুটবল জীবনের শুরু ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান জুনিয়র দলে যোগদানের মাধ্যমে। বয়স তখন সবে ৮ বছর। জন্ম ১৯৩৮-এর ১৫ই জানুয়ারি। এরপর আজীবন ছিলেন ওই সবুজ মেরুনেই। মোহনবাগানে যোগ ১৯৫৪ সালে, অধিনায়কত্ব শুরু ১৯৬০ সাল থেকেই। আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ডুরান্ড কাপ সহ একের পর এক সাফল্য। সালটা ১৯৬২, জাকার্তায় এশিয়ান গেমসের সোনা জয়। ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলা তথা ভারতের মাথা উঁচু হয়েছিল আরও একবার। গোলদুটি করেছিলেন পি কে ব্যানার্জী এবং জার্নেল সিং। এছাড়াও অধিনায়ক হিসাবে তেল আভিভে এশিয়া কাপের রৌপ্য পদক জয়।
তিনি অবসর নেন ১৯৬৪ তে। এরপরও কোচ হিসেবে চালিয়ে গেছেন নতুন কারিগর তৈরির কাজ। এই সময়ই যোগদান করেছেন ক্রিকেটার হিসেবেও। সেখানেও তাঁর নজরকাড়া পারফরমেন্স। অল রাউন্ডার হিসেবে খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। বাংলাকে নেতৃত্ব দিয়ে রঞ্জি ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন চুণী গোস্বামী। ৪৬টি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ম্যাচ খেলে একটি সেঞ্চুরি সহ ১৫৯২ রান এবং ৪৭ টি উইকেটের রেকর্ড আছে তাঁর ঝুলিতে। তাঁর প্রয়াণে আরও একবার নিঃস্ব হল ক্রীড়াজগৎ। খেলোয়াড় হতে গেলে মননের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় প্রাঞ্জল মানসিকতার। সেই প্রাঞ্জল মানসিকতার এক দুর্দান্ত উদাহরণ ছিলেন চুনী গোস্বামী। কলকাতা তথা বাংলার ময়দানে নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হিসেবেই থেকে যাবেন তিনি চিরকাল। ময়দানের প্রতিটি সবুজ ঘাসে লেখা থাকবে এই প্রবাদপ্রতিম খেলোয়াড়ের কথা। সবুজ ঘাসের মতোই চির নতুন হয়ে বাঙালির হৃদয়ে থেকে যাবেন তিনি।
Discussion about this post