ফলাফল প্রকাশের কালে সাফল্য কেবল নম্বরে! তবে রাজ্য জুড়ে ১১ লক্ষ ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে বেশিরভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। কেউ মায়ের সাথে লোকের বাড়ি বাসন মাজে তো কেউ বা বাবার সাথে দিনমজুরের কাজে যায়। কেউ হয়তো সারা বছর টিমটিমে আলোয় অতি কষ্টে পড়াশোনা করেছে। তারা জানে না এ আলোয় তাদের ভবিষ্যৎ দেখা যাবে কিনা। তবে এরা কেউ হাল ছেড়ে দেয়নি। সাহসের ডানায় ভর করে বসেছে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায়। রেজাল্ট প্রকাশের পর কারোর নম্বর কম কারোর বেশি। কেউ হয়তো উত্তীর্ণ হতে পারেনি সামান্য এই পরীক্ষায়। তবে পাড়ার কোনো মানুষের বিপদে সবার আগে এগিয়ে গেছে এদেরই মধ্যে কোনো একজন। গোটা দিন জুড়ে চলা রেজাল্টের খবরে এদের কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ নম্বর পেটের ভাত জুটিয়ে দিতে পারে না। তাই এদের ফলাফল ভালো হবার কথাও নয়। তবু এরা সফল।
আর এইরকম ছাত্র ছাত্রীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘পৃথিবীর পাঠশালা।’ এই স্বাধীন উদ্যোগের এক সক্রিয় মুখ শাম্ভব চাকী জানিয়েছেন, তাদের পাঠশালার কিছু ছাত্র ছাত্রীদের কথা। সালমা খাতুন, বাড়ি পাটুলী। তার পরিবার চেয়েছিল বিয়ে দিয়ে দিতে। কিন্তু মায়ের সহযোগিতায় সে এবার মাধ্যমিক দেয়। তার প্রাপ্ত নম্বর ২৩০। এছাড়াও আছে অনিমেষ হালদার, লেখাপড়া ছেড়ে কাজ করারই কথা ছিল তার। তবে এবারে পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ২০৬। অনিমেষের একটা ভালো দিক হলো মানুষের বিপদে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে সবার আগে।
রোজ খেটে খাওয়া ছেলেমেয়েদের কাছে ছিল না স্মার্ট ফোন। বিলাসিতা বলতে হয়তো পেট ভরানোর মত ভাত। কিন্তু তারা আজ আত্মবিশ্বাসের জোরে বসেছে মাধ্যমিকে। কেউ পাশ করেছে কেউ ফেল। তবে এর মানে তারা অসফল তা একেবারেই নয়। পড়াশোনার প্রতি তাদের আগ্রহ বরং বেড়েছে। নিজেরাই এগিয়ে এসে বলছে পরের ক্লাসে ভর্তির কথা। আবার এরাই দিনের শুরুতে বেরিয়ে পড়ছে রোজের কাজে। জীবনযুদ্ধের জয় তো আসলে ঠিক এরকমই হয়। ছাত্র সমাজ এভাবেই এগিয়ে চলুক। সমাজ আলোকিত হোক ওদের আলোয়।
Discussion about this post