হিমালয়ে অবস্থিত রূপকুন্ড হ্রদ। তবে বাকি আর পাঁচটা হ্রদের থেকে বেশ আলাদা। গরমকালে উষ্ণতা বাড়ার সাথে হ্রদের বরফ গলতে শুরু করে। এরপরেই হ্রদে ভেসে উঠতে দেখা যায় মানুষের মৃতদেহ। আর এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই হ্রদের নাম কঙ্কাল হ্রদ।
উত্তরাখন্ডের লোকগাথা অনুযায়ী বহুকাল আগে বতর্মান উত্তরাখন্ডের চামেলী জেলার নৌটি গ্রামে বাস করতেন স্বয়ং মহাদেব পত্নী নন্দাদেবী। একবার তিনি শ্বশুরবাড়ি রওনা দেন শোভাযাত্রা নিয়ে। পথে নন্দাদেবীর ভীষণ তৃষ্ণা পায়। অথচ ত্রিসীমানায় কোনো জলের চিহ্ন ছিল না। তৃষ্ণার্ত নন্দাদেবী মহাদেবকে স্মরণ করেন। মহাদেব তখন দৈববলে তার তৃষ্ণার্ত স্ত্রীর জন্য তৈরি করেন এক ছোট্ট হ্রদ বেদিনী কুন্ড। নন্দাদেবী ও শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা সেই জল পান করে তৃষ্ণা মেটান। রাস্তায় আবার তৃষ্ণা পেতে পারে সেই কথা ভেবে মহাদেব যাত্রাপথে আরো একটি হ্রদ তৈরি করেন যা রূপকুন্ড হ্রদ নামে পরিচিত।
রহস্যে ঘেরা এই হ্রদের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় ১৯৪২ সালে এক ব্রিটিশ প্রহরী হ্রদটি আবিষ্কার করেন। এই হ্রদ থেকে মোটামুটি ৮০০ টি কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর মধ্যে ৩৮ টি কঙ্কালের ডিএনএ রিপোর্ট তৈরি করেন। তাদের গবেষণায় জানা যায় কঙ্কালগুলি মোট তিনটি জিনগত স্বতন্ত্র গোষ্ঠীর অন্তর্গত। তাঁরা কমপক্ষে দুটি তরঙ্গে মারা যায় তাও প্রায় ১০০০ বছরের ব্যবধানে। গবেষণায় এও বোঝা গিয়েছে কঙ্কালগুলি যেই মানুষদের তারা বেশ শক্তিশালী এবং লম্বা গড়নের ছিল।
২০০৪ সালে ন্যাশানাল জিওগ্রাফির তথ্যচিত্র অনুযায়ী এই দলগুলি কোনো মহামারীতে মারা যায় নি। কারণ ডিএনএ বিশ্লেষণে কোনওরকম ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। আবার এই মৃতদেহগুলি কোনো যুদ্ধের ফলাফল হিসাবেও ধরা যায় না। তার কারণ ওই মৃতদেহগুলির সঙ্গে কোনো অস্ত্রর হদিশ মেলেনি। আবার কেউ কেউ আশঙ্কা করেছেন হয়তো কোনো ব্যবসায়িক দল সেই পথে প্রাকৃতিক দূর্যোগের শিকার হয়ে মারা গিয়েছে। যদিও রূপকুন্ড কিন্তু কোনো বাণিজ্য পথে পড়ছে না। পেন্সিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নৃবিজ্ঞানী ক্যাথলিন মরিসন বলেছেন, যখন এক স্থানে আপনি প্রচুর মৃতদেহ একসাথে দেখতে পাবেন, ধরে নিতে পারেন সেটি আসলে একটি কবর স্থান। আসলে সেইভাবে কিন্তু কোনো সঠিক সম্ভবনাই আঁচ করা যায়নি এখোনো। তবে রূপকুন্ড হ্রদে ভেসে ওঠা কঙ্কালগুলি নিজের চোখে দেখলে হৃদয় কেঁপে যেতে বাধ্য।
Discussion about this post