স্বামী স্ত্রীকে পিটিয়ে খুন, মদ খেয়ে স্ত্রীকে মারা এসব নিত্যদিনের ঘটনা। খবরের কাগজ খুললে এইসব ঘটনা রোজই চোখে পড়ে। তবে সব ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে না লুকিয়ে যায়। নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে ভারতের বছরের পর বছর যেসব খবর হয় তার অধিকাংশই ঘটে পরিবারের ভেতর। স্বামী বা স্বজনরাই এসব সহিংসতার হোতা। জানা যায়, ২০২০ সালে পুলিশের কাছে ১১২,২৯২ নারী ঘরের ভেতর সহিংসতার অভিযোগ করেছিলেন। তার অর্থ, সে বছর প্রতি পাঁচ মিনিটে পুলিশ এ ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছে।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা ঘেঁটে দেখলে বোঝা যাবে ট্রেন্ডগুলি। চলতি বছরের এপ্রিলে কাঁথিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় স্বামীকে। ২০২১ সালের জুন মাসে উত্তর প্রদেশ রাজ্যে খাবারের সাথে সালাদ না দেওয়ার জন্য বউকে হত্যার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিগত বছরে রাজশাহীর দুর্গাপুরে পারিবারিক কলহের জেরে বিয়ের তিন মাস পর স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। ২০২১ সালেরই ঘটনা, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে মাংসে স্বাদ হয়নি বলে স্ত্রীকে পিটিয়ে খুন করে স্বামী। পলাতক স্বামী। শুধু তাই নয় পরিবার নিয়ে ভারত সরকারের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পরিবার এবং সন্তানদের ঠিকমত দেখভাল না করলে, স্বামীকে না বলে বাইরে গেলে, স্বামীর সঙ্গে যৌন সঙ্গমে আপত্তি করলে অথবা ঠিকমত রান্না না করলে স্বামীরা স্ত্রীদের পেটাতেই পারেন। এই সমীক্ষায় চল্লিশ শতাংশ মহিলাই এই কথায় সন্মতি জানিয়েছেন।
কেন নারীরাও বউ পেটানোর পক্ষে তা বলতে গিয়ে অমিতা পিত্রে বলেন, “পুরুষতন্ত্র সমাজে নারী-পুরুষের অবস্থান এবং ভূমিকা নির্ধারণ করে দেয় এবং নারীরা তা হজম করে নেয়। পরিবার এবং সমাজই নারীর বিশ্বাস, মূল্যবোধের নিয়ামক হয়ে দাঁড়ায়।” এখনও বেশিরভাগ মানুষ মনে করে থাকেন “পালকিতে করে তুমি স্বামীর ঘরে ঢুকছো। বের হবে শুধু চিতায় করে।” ফলতঃ অধিকাংশ বিবাহিত নারীই, এমনকি যারা নিয়মিত পিটুনির শিকার হন তারাও। কাজেই নারীরা এই সহিংসতাকে ভাগ্য হিসাবে মেনে নেয়। এ নিয়ে কোনো অভিযোগ অনুযোগ করে না। বিয়ে বাঁচানোর জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত সকলেই। আবার লোকে কী বলবে বা সমাজ কী বলবে নিয়ে নিয়ে ভাবনা মানুষের মনে আগে আসে। বিগত কয়েক বছরে আমাদের মানসিকতা বদলেছে খুবই কম।
Discussion about this post