আজ যে জায়গার কথা লিখবো সেটা পশ্চিমবঙ্গের ভিতর অবস্থিত এক অন্য দেশ। আলিপুরদুয়ার জেলার ভুটান সংলগ্ন ১৩টা গ্রাম নিয়ে বক্সা দুয়ার। মূলতঃ এখানকার মানুষেরা দুকপা সম্প্রদায়ের। পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি উপজাতির মধ্যে এরা এক সম্প্রদায়। ১৮৬৫ সালের ভুটান-ইন্ডিয়া দ্বিতীয় যুদ্ধের পর থেকে এরা ভারতীয়। এখানেই অবস্থিত বিখ্যাত বক্সা দুর্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এখন এটা সংস্কারের কাজ চলছে। শীঘ্রই এটি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে খুলে দেওয়া হবে। এই গ্রামগুলোতে নেপালি, জোংখা (ভুটানি) ভাষাভাষীর মানুষেরা বসবাস করে।
একসময় পাহাড় জুড়ে কমলালেবুর চাষ করত এই দুকপারা। ৯৩ এর বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে বনদপ্তরের নিষেধের ফলে এরা পেশাচ্যুত হয়। তারপর মূলতঃ ভুটানে সিকিমে এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরের কাজে যেতে থাকে। এভাবেই কেটে যায় প্রায় বিশটা বছর। ইন্টারনেটের যুগে ধীরে ধীরে এই জায়গাতে পর্যটনের প্রসার ঘটে। কোচবিহার, আলিপুর, শিলিগুড়ির অনুসন্ধানকারী ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা এই জায়গাতে আসতে শুরু করে। এক পরিচিতি লাভ করে এই জায়গাটি। এক এক করে হোম স্টে তৈরি হয় গড়ে উঠে পর্যটনকেন্দ্র লেপচাখা, বক্সা, সদরবাজার।
মানুষ অফবিট জায়গা খোঁজে কোলাহলপূর্ণ শহর থেকে বাইরে গিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার আসায়। বক্সাদুয়ারের চেতেগাঁও এগারোটি পরিবার নিয়ে তৈরি। এই গ্রামকে নিঃসন্দেহে ‘সাইলেন্ট ভিলেজ’ আখ্যা দেওয়া যায়। এখানে এখনো সেভাবে পর্যটনের পরিকাঠামো গড়ে উঠেনি। এক কলকাতার পর্যটকের কথায় “এটা সিকিম, হিমাচল, কাশ্মীর বা কেরালা নয় এই জায়গা অনুভব করার জায়গা এখানে এলে অর্ধেক ভুটান ঘোরা হয়ে যায়।” স্বভাবতই তাই এখানের মানুষ চায়ের বদলে ‘সুজা’ দিয়ে আপ্যায়ন করে (মাখন, নুন, সোডা দিয়ে বানানো এটি ভুটানের ওয়েলকাম ড্রিংক)। এখানে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে, গাড়ির আওয়াজ পৌঁছয় না, পাহাড়ের কোল থেকে সূর্যোদয় হয়। মায়াবী জায়গা এই চেতেগাঁও, সকালের ঈষৎ ঠান্ডা হওয়া শরীরকে কিঞ্চিৎ আন্দোলিত করে দিলে অবচেতন মনটা চেতনায় ফেরে।
এখানে অবস্থিত বিখ্যাত সিল্ক রুট তিনশো থেকে চারশো বছর আগে এখান থেকে সিল্ক, মশলা তিব্বত ও চিনে রপ্তানি হতো এখনো সেই রাস্তা ভগ্নপ্রায় হলেও আজও বর্তমান। মূলতঃ এই বাণিজ্য সড়ক ও বণিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কারণেই বক্সা দুর্গের নির্মাণ করে তিব্বতীরা। জঙ্গল ঘেরা এই রাস্তায় উৎসাহী পর্যটকরা ট্রেকিং করেন। কলকাতাসহ অনেক জায়গায় দেখেছি ‘ট্রাইবাল ইন্ডিয়া’র শোরুম আছে। ড্রুকপাদের তৈরি হাতের বানানো জিনিস ‘ট্রাইবাল ইন্ডিয়া’র অনেক জিনিসকে দশ গোল দিয়ে দেবে যা এখনও পৌঁছইনি বাজারে বা গিফট শপে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর হয়ে গেলেও বক্সা পাহাড় বা আশেপাশে ভালো বিদ্যালয় বা চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে উঠেনি। এখনো এদের ভরসা আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল যা প্রায় ৩১কিলোমিটার দূরে।
প্রতিবেদক অর্ক দে
Discussion about this post