“গাজনের বাজনা বাজা! কে মালিক? কে সে রাজা? কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?” গাজনের উৎপত্তি গর্জন থেকে হয়েছে বলেই শোনা যায়। আর তাই বোধহয় কবির এই ডাক। শোনা যায়, গাজনের সন্ন্যাসীদের গান রীতিমত বিপাকে ফেলেছিল ব্রিটিশদেরও। এরা অবশ্য একেবারে সন্ন্যাসী নয়। সাজসজ্জার রীতি অনুযায়ী সমাজে এদের নাম ‘সং’। মুখে রঙ মেখে তৎকালীন সময়ে ব্রিটিশদের নিয়ে অনায়াসে ছড়া কেটে ফেলত এরা। তবে এ রীতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি একেবারেই।
আকারে ছোট হলেও এই সং সেজে গাজন উদযাপন আজও চলে নদীয়ার চাকদহে। চাকদহের চাপাতলা নামক জায়গায় গাজন পালিত হয় মহা সাড়ম্বরে। নববর্ষকে দ্বোরগোড়ায় দাঁড় করিয়ে সং-এর গানকে সাথী করে শুরু হয় চড়ক। সন্ন্যাস নিয়ে চড়কগাছে ঘুরে অনেক জায়গাতেই চড়ক পালিত হয়। তবে এ জায়গার বিশেষত্ব হচ্ছে চড়কের দিন সং এর গান। দলগত ভাবে ঘুরে ঘুরে নাচ করা হয়, নিজেদের গানের সাথে। আর গানের মাঝের রব থাকে ‘হর হর মহাদেব।’ এ দিন উদযাপনের আনন্দ ফুটে ওঠে চড়ক দেখতে আসা মানুষদের মুখে।
আসলে হরকালীর সঙ্গে মহাদেবের বিয়ের দিনই চড়কের দিন। তাই এদিন যারা সং সাজে তাদের মধ্যে একজন সাজে শিব। আরেকজন হরকালীর সাজে সাজিয়ে নেয় নিজেকে। এরপর শুরু হয় ওদের নাচ গান। সঙ্গে অবশ্য আরও অনেক সাথীরা থাকে নানান সাজে। ওদের মতে তারা মহাদেবের চ্যালা। ধর্মীয় বিরোধ, নিয়ম ছেড়ে এ যেন গানের মাধ্যমে মুক্তি। তবে এদিনে গাওয়া সব গানই হয় শিবের উদ্দেশ্যে। তাই একে বলা হয় শিবের গাজন।
চাপাতলার এ গাজনের সাক্ষী হতে আপনাকে আসতে হবে চাকদহ। শেয়ালদহ থেকে শান্তিপুর, রানাঘাট কিংবা গেদেগামী যে কোন ট্রেন ধরে চলে আসতে পারেন। আপনাকে নামতে হবে চাকদহ স্টেশনে। এরপর সেখান থেকে বাস ধরে সোজা চাপাতলার মোড়। গাজনের দিনের লোক সমাগম আপনাকে জানান দেবে অনুষ্ঠানের সময় আগত। এ গানে মুক্তি ঘটে মনের। তবে গান ছাড়াও চলে মেলা। চড়কের মেলা।খাবারের দোকান তো থাকেই তার সাথে থাকে আরও অন্যান্য জিনিসপত্রের দোকান। মেলার সাথে গান মিলে মিশে গোটা পরিবেশ পায় মুক্ত বাতাস। তবে আর কি, দেরি না করে চলে আসুন। সং এর গানে চড়কের মেজাজে সামিল হতে।
Discussion about this post