দোল উৎসবের আবহে বাঙালিরও এখন মেজাজ রঙীন। শিমূল পলাশের বন ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলেও, বঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণ হারিয়ে যায়নি সেই দোলযাত্রার আমেজ। আর পশ্চিমবঙ্গের দোলযাত্রার ইতিহাসে অন্যতম কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের দোলযাত্রা। ফাল্গুনী পূর্ণিমা নয়, এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় বসন্ত পঞ্চমী বা সরস্বতী পুজো থেকে। ফাল্গুনী শুক্লা চতুর্দশী, ফাল্গুনী পূর্নিমা আর কৃষ্ণা প্রতিপদ এই তিনদিন অসংখ্য আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয় মদনমোহন দেবের দোলযাত্রা।
চতুর্দশীতে হয় মদনমোহন দেবের গন্ধাধিবাস ও বহ্নি উৎসব। সন্ধ্যায় মদনমোহন দেবের আরতির পর সুসজ্জিত হাওদায় চাপিয়ে শোভাযাত্রাসহ তাকে নিয়ে আসা হয় রাসমেলার মাঠে। মন্দিরে ফিরে আসে উৎসবের মেজাজ। শোভাযাত্রায় সামিল হয় রাজমাতা মন্দিরের বিগ্রহ, ডাঙড় আই মন্দিরের বিগ্রহ এবং রাজ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিগ্রহ। মেলার মাঠে প্রতিটি বিগ্রহের জন্য প্রস্তুত করা হয় বুড়ির ঘর বা ভেড়ার ঘর। ঘরগুলো আদতে কুঁড়ে ঘর তার দেওয়াল তৈরী হয় ভেড়ার লোম দিয়ে। মেষরূপী অসুর বা মেড্রাসুরের প্রতীক হিসেবে পোড়ানো হয় এই কুটিরগুলোকে। এই হল বহ্নি উৎসব।
বহ্নি উৎসবের পর বিগ্রহগুলোকে ফিরিয়ে আনা হয় মূল মন্দিরের বারান্দায়। সেখানে তাঁদের স্থাপিত করা হয় অস্থায়ী দোলমঞ্চে। পরদিন শাস্ত্র মতে শুরু হয়ে যায় মদনমোহন দেবের দোলযাত্রার পুজো। পুজোর দিন মদনমোহনের জন্য তৈরী করা পঞ্চব্যাঞ্জনের পদ। দোলযাত্রার প্রথমদিন ‘দেবদোল’, তাই এদিন সাধারণের মাঝে পালিত হয় না কোনোরকম রঙ খেলা। রাসমেলার মাঠে পরপর সাতটি হাওদা খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়। দেবতার পায়ে রাজপ্রতিনিধি এবং রাজপুরোহিতের পলাশ ফুল ও শুকনো আবির সমর্পণের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় দোল উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের আনাচে কানাচে পাওয়া যাবে দোলযাত্রার এমনই অনেক টুকরো ছবি। যেখানে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বেঁচে আছে এখনও, নিরবিচ্ছিন্নভাবে!
Discussion about this post