শুধু গানের কথায় নয়, বেশ কিছু বছর আগেও কলকাতায় বাজত সকাল ‘ন’টার সাইরেন”। এই শহরের দোকানি, পথচারি বা অফিসবাবুরা সেই সাইরেনের ভোঁ-এ মিলিয়ে দিতো ঘড়িতে দম। আজকের ডিজিটাল ওয়াচ বা স্মার্টফোনের সময়ে একথা শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। সেসময় শৈশব, কৈশোর কাটানো বহু মানুষের স্মৃতিতে সেই ন’টার সাইরেন আজও স্পষ্ট, কারন সেই সাইরেন শুধু সময় নয় আরও অনেক কিছুর সংকেত ছিল।
কলকাতায় সাইরেন এসেছিলো যুদ্ধকালীন সময়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিরা যখন কলকাতায় বোমা ফেলে তখন মূলত সাবধানতার জন্য শহরজুড়ে সাইরেন বাজানো শুরু হয়। তারপর আবার সাইরেন ফিরে আসে ১৯৭১-এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কিছু আগে। সেই থেকে শুরু হওয়া ন’টার সাইরেন কলকাতায় চলেছিল টানা ২৫ বছর। তারপরে সে রয়ে গেল শুধু কলকাতা নয় , আপামোর বাঙালীর স্মৃতির পাতায় নচিকেতা চক্রবর্তীর ‘নীলাঞ্জনা’ গানে।
সেই সাইরেন যুগের মানুষদের কাছে ন’টার সাইরেনের কথা উঠলে আজও তাদের চোখে ভেসে ওঠে- ভোঁ বাজার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতো বাবার অফিস বেরোনোর তাড়াহুড়ো, মায়ের রান্নার তোড়জোড়, দিদির কলেজ বেরোনোর গোছগাছ, ইস্কুলে যাওয়ার জন্য স্নান করা, ঘড়িতে দম দেওয়া। নিত্যদিনের আরও কতো কিছুই না জড়িয়ে ছিলো ওই একটি ভোঁ-এ। শুধু ঘড়ি নয় গোটা একটা শহরের মানুষজনকে দম দিয়ে দিতো ন’টার সাইরেন। সকালের আলসে ভেঙে শহরটা দৌড়তে শুরু করত।
দিনকালের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু বদলে যাওয়াই দস্তুর , তবুও ভাবতে অবাক লাগে এতো বড়ো একটা শহরের নাকি একটাই ‘অ্যালার্ম’ ছিলো। আজকের রাতজাগা প্রজন্মের সবার মোবাইলেই সকালের কোনো না কোনো সময়ে অ্যালার্ম সেট করা থাকে। সেই সময় মেনে ওঠে হোক বা না হোক। কিন্তু সবার সময় আলাদা আলাদা। সেসময়ও সবার জেগে ওঠা বা কাজ শুরু সময় এক ছিলো এমনটা নয়, তবু একটা নির্দিষ্ট আওয়াজে নির্দিষ্ট সময়ের টনক তো নড়তো একসঙ্গে। নিন্দুকেরা অবশ্য বলবে বাঙালী শুধু পুরনো কাসুন্দি ঘাঁটে, পুরনো কাসুন্দির স্বাদ বেশি হলে না ঘেঁটে উপায় কী।
Discussion about this post